আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ‘ঈদুল আজহা’ পালিত হবে। আমাদের দেশে ঈদুল আজহা ‘কোরবানির ঈদ’ নামেও সমধিক পরিচিত।
ইসলামি চিন্তাবিদদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, কোরবানি ওয়াজিব। অনেকের মতে কোরবানি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে তা ত্যাগ করা যাবে না। কোরবানির হিসাবকে অনেকেই জাকাতের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন, যা ঠিক নয়। যার কাছে ঈদুল আজহার দিনগুলোতে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছর থাকা জরুরি নয়। বরং কোরবানির শেষ দিন সূর্যাস্তের আগে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব।
নেসাবের ব্যাখ্যা হলো, স্বর্ণের নেসাব ৮৭.৪৮ গ্রাম (সাড়ে সাত ভরি)। রূপার নেসাব ৬১২.৩৬ গ্রাম (সাড়ে বায়ান্ন ভরি)। অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মূল্যমান প্রযোজ্য হবে। সোনা-রূপা অথবা সোনা-রূপা ও অন্যান্য সম্পদ থাকলে সে ক্ষেত্রেও ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মূল্যমান প্রযোজ্য হবে।
অন্যান্য সম্পদের মধ্যে ধরা হবে ব্যবসার পণ্য, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় না- এমন জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ফার্ণিচার, তৈজসপত্র, যেকোনোভাবে যেকোনো উদ্দেশ্যে জমানো টাকা। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব এক বছর থাকা শর্ত নয়। হিসাব বের করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো- রূপার বাজারদর জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহভীতি ও তার নৈকট্য অর্জন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের (পশুদের) গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, এমনকি তাদের রক্তগুলোও না। কিন্তু তোমাদের ‘তাকওয়া’ অবশ্যই তার (আল্লাহর) কাছে পৌঁছে। ’ -সূরা হজ: ৩৭
অর্থাৎ আমরা কোন আকারের, কত মূল্যমানের পশু কোরবানি করলাম, আল্লাহর কাছে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আল্লাহতায়ালা শুধু দেখতে চান, যে বান্দা কোরবানি করছে সে তার মনের গভীরে আল্লাহকে কত বেশি ভালোবেসে কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আল্লাহতায়ালা এটাও লক্ষ্য করেন যে, বান্দার মনে আল্লাহর ভয় কতটুকু সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া কোরবানির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিধিবিধান মেনে চলার ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটাও আল্লাহর দরবারে বিবেচ্য বিষয়।
সে হিসেবে বলা যায়, কোরবানি নিছক কোনো আনুষ্ঠানিক পশু জবাইয়ের উৎসব নয়। পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের ভেতরে জন্মানো পশুত্বের কতভাগ বিসর্জন দিতে পারলাম তা-ই বিবেচ্য বিষয়।
তাই আমাদের ভাবতে হবে, আমরা যে কোরবানি দিচ্ছি তা আমাদের জন্য ওয়াজিব কি-না? নাকি আমরা রেওয়াজ মোতাবেক কোরবানি দিচ্ছি? নাকি পাড়া-প্রতিবেশীদের দেখাদেখি সামাজিকতা রক্ষার খাতিরে এবং গোশতের চাহিদা পূরণের জন্য কোরবানি দিচ্ছি? নাকি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি দিচ্ছি? আমাদের মনের গভীরে আল্লাহকে কত বেশি ভালোবেসে আমরা কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আল্লাহ এটাও লক্ষ্য করেন যে, আমাদের মনে আল্লাহর ভয় কতটুকু সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া যৌথভাবে কোরবানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাদের সঙ্গে শরিক বা অংশীদার হিসেবে কোরবানি দিচ্ছেন, আপনার জানামতে তাদের কোরবানির উদ্দেশ্য কী?
এ বিষয়গুলো সামনে রেখে যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে অংশীদার নির্বাচন করতে হবে। আরেকটি কথা, কোরবানির নিয়ত করার সময় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিয়ত করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদিস অনুযায়ী- ‘সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ’ তাই কোরবানির নিয়ত করতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর নামে। কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর নির্দেশিত ও তার রাসূল (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে, অন্য কোনো নিয়ম-পদ্ধতি এখানে চলবে না।
উপরোক্ত বিষয়গুলো স্মরণ রেখে আমরা যদি কোরবানির প্রস্তুতি নিই, সে অনুযায়ী কোরবানি করি, তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের কোরবানিকে গ্রহণযোগ্য ইবাদত হিসেবে কবুল করবেন বলে আশা করা যায়।
কোরবানি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। তবে এসব ফজিলতপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো, তা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে, লোক দেখানো কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না। যদি আল্লাহতায়ালাকে পাওয়ার আশা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হয়, তাহলে সওয়াবের বিপরীতে গোনাহের বোঝা বহন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
এমএ/