ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীর এক বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আফফান।
বাল্যকাল থেকেই তিনি শিক্ষা, পান্ডিত্য, মহানুভবতা ও ন্যায়নিষ্ঠার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা তার ওই জ্ঞানের পিপাসাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে তিনি ইসলাম গ্রহণের পরও জ্ঞান সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
হজরত উসমান (রা.) ছিলেন কোরাইশ বংশের অন্যতম কুষ্ঠিবিদ্যা বিশারদ। কোরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল তার গভীর জ্ঞান। তার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্য ও মানবিকতাবোধ ইত্যাদি গুণাবলির জন্য সবসময় তার পাশে মানুষের ভিড় জমে থাকত। জাহেলি যুগের কোনো অপকর্ম তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল তার মহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যৌবনে তিনি অন্যান্য অভিজাত কোরাইশদের মতো ব্যবসা শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায় অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। মক্কার সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে 'গনি' উপাধি লাভ করেন।
৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর (৬৩৪-৬৪৪ খ্রি.) মৃত্যুর পর তিনি মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফার পদে আসীন হন। হজরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে পবিত্র কোরআনে কারিমের সংগৃহীত অংশগুলো সুবিন্যস্ত করা হয়। ওই সংগৃহীত অংশকে পুস্তকাকার দানের নিমিত্তে বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জায়েদ বিন সাবেত (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তার খেলাফতকালেই ওই কাজ সম্পন্ন হয়। তাই তাকে জামিউল কোরআন বা কোরআন একত্রকারী বলা হয়।
হজরত উসমান (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়তের সূচনা-পর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর আমৃত্যু জানমাল ও সহায়সম্পত্তি দিয়ে মুসলমানদের উপকার করে গেছেন।
ইসলাম গ্রহণের পর নবী মুহাম্মদ (সা.) তার কন্যা রুকাইয়্যার সঙ্গে তার বিয়ে দেন। হিজরি দ্বিতীয় সনে তাবুক যুদ্ধের পরপর মদিনায় রুকাইয়্যা মারা যায়। এরপর নবী করিম (সা.) তার দ্বিতীয় কন্যা উম্মে কুলসুমের সঙ্গে তার বিয়ে দেন তৃতীয় হিজরিতে। এ কারণেই তিনি ‘জিন্নুরাইন’ বা দুই জ্যোতির অধিকারী হিসেবে খ্যাত।
বিদ্রোহীদের দ্বারা দীর্ঘদিন নিজ আবাসে অবরুদ্ধ থাকার পর ৩৫ হিজরির ১৮ জিলহজ শুক্রবার বাদ আসর ইসলামের এ তৃতীয় খলিফা দুষ্কৃতকারীদের হামলায় শহিদ হন। জান্নাতুল বাকির ‘হাশমে কাওয়াব’ নামক অংশে তাকে দাফন করা হয়। রাজিয়াল্লাহু অানহু।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
এমএ