পৃথিবীতে কেউ তার সব কাজ একা একা সম্পাদন করতে পারে না। বিশেষত্ব এই জটিল শিল্পায়নের যুগে জীবনধারণের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় অধীনদের প্রতি অত্যাচার ও নির্মমতার করুণ কাহিনী। ইসলাম চাকর-চাকরানিদের প্রতি সুন্দর ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের চাকর-নকর বা দাসদাসী প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহ যার ভাইকে অধীন করে দিয়েছেন তার উচিত তাকে তাই খাওয়ানো, যা সে নিজে খায় এবং তাকে তাই পরানো, যা সে নিজে পরে থাকে। তাকে এমন কর্মভার দেবে না, যা তার সাধ্যাতীত। যদি কখনও তার ওপর অধিক কর্মভার চাপানো হয় তবে যেন তার ওপর সাহায্যের হাত প্রসারিত করা হয়। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আমাদের সমাজে অনেকেই তাদের চাকর-চাকরানিকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়। এটাও ইসলামে নিষেধ। প্রিয় নবী (সা.) তার অধীনদের সঙ্গে খুবই ভালো ব্যবহার করতেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি দীর্ঘ দশ বছর প্রিয় নবী (সা.)-এর খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনও 'উহ' শব্দটি বলেননি এবং কোনোদিন বলেননি, এটা করোনি কেন? ওটা করোনি কেন? আমার অনেক কাজ তিনি নিজে করে দিতেন। -মিশকাত
হজরত জায়েদ (রা.) প্রিয় নবীর ছেলের মতো আদর-যত্নে বড় হয়েছেন। প্রাণঢালা স্নেহ পেয়েছেন প্রিয় নবীর। বড় হলে প্রিয় নবী (সা.) আপন চাচাতো বোন জয়নবের সঙ্গে বিয়ে দিলেন জায়েদের। পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় করে নিলেন তাকে। জায়েদ ক্রীতদাস হিসেবে এসেছিলেন প্রিয় নবী (সা.)-এর সংসারে। কিন্তু একবারও মনে করলেন না সে কথা। প্রিয় নবী (সা.) জায়েদের ছেলে উসামাকে খুব আদর করতেন। মনে হতো নাতি ইমাম হাসান ও হোসাইনের মতোই আপন।
আমাদের সমাজে অনেকেই চাকর-চাকরানির ওপর হাত পর্যন্ত ওঠায়। এটা অত্যন্ত মন্দ কাজ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে বলেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে চাকর-চাকরানিকে মারে, কিয়ামতের দিন তাকে তার পরিণাম দেওয়া হবে। -বায়হাকি
অন্যি এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের থালা-বাটি তোমাদের চাকর-চাকরানির হাতে ভেঙে গেলে তাদের মারধর করবে না। কেননা তোমাদের আয়ুষ্কাল যেমন নির্ধারিত, থালা-বাটিরও তদ্রূপ। -দায়লামি
চাকর-চাকরানি সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.)-এর শেষ অসিয়ত ছিল, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে তোমাদের অধীনদের ব্যাপারে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার মাঝে তিনটি গুণের সমাবেশ হবে, আল্লাহ তার মৃত্যু সহজ করে দেবেন এবং তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। গুণ তিনটি হচ্ছে-
১. দুর্বলের সঙ্গে বিনয় ব্যবহার; ২. মাতা-পিতার প্রতি ভালোবাসা; ৩. চাকর-চাকরানির সঙ্গে সদাচরণ।
প্রত্যেকের উচিত ইসলামি আদর্শে চাকর-চাকরানিদের প্রতি সদয় ব্যবহার করা। প্রত্যেক মনিবেরই মনে করা উচিত, চাকর-চাকরানিও তার মতোই মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
এমএ/