ইমাম নাসাঈ (রহ.) ইলমে হাদিসের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি সিহাহ সিত্তার অন্যতম বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ ‘নাসাঈ শরীফ’সহ অনেক মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করে মুসলিম বিশ্বে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।
ইমাম নাসাঈর প্রকৃত নাম আহমাদ, পিতার নাম শোয়াইব। ইমাম নাসাঈ (রহ.) ২১৫ হিজরি মোতাবেক ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ২১৪ হিজরিতে খোরাসানের ‘নাসা’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। এ স্থানের দিকে সম্বন্ধিত করে তাকে আন-নাসাঈ বলা হয়। এ নামেই তিনি সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
ইমাম নাসাঈ (রহ.)-এর সময়ে খোরাসান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইলমে হাদিসের কেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে অনেক খ্যাতনামা বিদ্বানের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি সেখানেই প্রখ্যাত আলেমদের তত্ত্ববধানে পড়া-লেখা শুরু করেন। ২৩০ হিজরিতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন দেশ ও জনপদ সফর করেন।
ইমাম যাহাবি (রহ.) বলেন, ‘জ্ঞান অন্বেষণের জন্য তিনি খোরাসান, হিজায, মিসর, ইরাক, জাযিরা, সিরিয়া এবং সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণ করেন। অতঃপর মিসরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ’
দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর ইমাম নাসাঈ (রহ.) হাদিসের দরস প্রদান শুরু করেন। অনেক শিক্ষার্থী তার নিকট থেকে ইলমে হাদিস শিক্ষা লাভ করেছে।
ইমাম নাসাঈ (রহ.) সুনানে নাসাঈ ছাড়াও কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে বেশি প্রসিদ্ধ লাভ করেছে নাসাঈ শরীফ। সুনানে নাসাঈতে সংকলিত হাদিস সংখ্যা ৪৪৮২টি। শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানীর গণনা অনুযায়ী নাসাঈর মোট হাদিস সংখ্যা ৫৭৫৮টি। এতে মোট একান্নটি অধ্যায় রয়েছে।
সুনানে নাসাঈর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাকে অপরাপর হাদিস গ্রন্থ থেকে পৃথক স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। যেমন-
অন্য বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থগুলোর ন্যায় সুনানে নাসাঈতে পুনঃউল্লিখিত হাদিসের সংখ্যা খুব কম। এতে পুনঃউল্লিখিত হাদিস নেই বললেই চলে।
এ গ্রন্থে কোনো কোনো স্থানে হাদিসের দুর্বোধ্য শব্দসমূহের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ইমাম নাসাঈ স্বীয় গ্রন্থে শক্তিশালী ও সহিহ সনদের ভিত্তিতে হাদিস সন্নিবেশিত করেছেন।
ইমাম নাসাঈ (রহ.) এ গ্রন্থে জীবনের প্রায় সকল দিক সম্পর্কিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখায় হাদিস সন্নিবেশিত করেছেন।
সুনানে নাসাঈর হাদিসের অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-পরিচ্ছেদগুলো ধারাবাহিকভাবে বিন্যস্ত। এ গ্রন্থের অনুচ্ছেদ-পরিচ্ছেদের শিরোনাম অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য। হাদিস ও শিরোনামের মধ্যে সাযুজ্য বিদ্যমান।
এ গ্রন্থে ‘অনুচ্ছেদ’-এর অনুকূলে কোরআনে কারিমের কোনো আয়াত থাকলে তাও সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
ইমাম নাসাঈ (রহ.) নির্মল চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি সদাসর্বদা আল্লাহতায়ালার ভয়ে ভীতবিহবল থাকতেন। একদিন পরপর তিনি সারা বছর নফল রোজা পালন করতেন। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ ও সময় পেলেই ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করতেন। তিনি একাধিকবার হজব্রত পালন করেছেন।
তার মৃত্যু ও দাফনের স্থান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেন তিনি মক্কায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার কেউ বলেন তিনি ফিলিস্তিনে ইন্তেকাল করেছেন।
হাফেয যাহাবি ‘তাযকিরাতুল হুফফাজ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ইমাম নাসাঈ (রহ.) ৩০৩ হিজরির সফর মাসের ১৩ তারিখ সোমবার ফিলিস্তিনে মৃত্যুবরণ করেন। ’
ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লিকান বলেন, ৩০৩ হিজরির শাবান মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮/৮৯ বছর। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে তাকে দাফন করা হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাফেজ আবু আমির বলেন, ‘তিনি ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ৩০৩ হিজরির ১০ সফর সোমবার রাত্রে মৃত্যুবরণ করেন এবং বায়তুল মোকাদ্দাসের সন্নিকটে তাকে দাফন করা হয়। ’
ইলমে হাদিসের প্রচার-প্রসার, হাদিস সংকলন ও সংরক্ষণে ইমাম নাসাঈ (রহ.)-এর অবদান অতুলনীয়। এ ক্ষণজন্মা মহামনীষীর জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য বহু শিক্ষণীয় বিষয়। আরবি তারিখ হিসেবে আজ তার মৃত্যু দিবস। এই দিনে তার প্রতি রইল অামাদের অসীম শ্রদ্ধা। দোয়া করি আল্লাহতায়ালা তার কবরকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করুন। আমিন।
:: মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এমএ/