ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা

যা মানুষকে অক্ষম করে দেয়, যা মানবীয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে তাকে বলা হয় মুজেযা। মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে আলোর পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে নবীদের প্রেরণ করেছেন।

আর প্রেরণের প্রমাণস্বরূপ নবীদের দান করেছেন বিভিন্ন মুজেযা। মুজেযা সরাসরি আল্লাহর কাজ। সৃষ্টি অবিকল তা করতে অক্ষম।

হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম কোনো জন্মান্ধের চোখে হাত বুলিয়ে দিলে সে চোখে দেখতে পেতো। কোনো কুষ্ঠ রোগীর গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে তার ত্বক স্বাভাবিক হয়ে যেতো। তিনি কোনো মৃতকে দাঁড়াতে বললে সে জীবিত হয়ে যেতো।

হজরত মূসা আলাইহিস সালাম বগলের নীচ থেকে হাত বের করলে তা থেকে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটতো। তিনি হাতের লাঠি ছেড়ে দিলে তা জীবন্ত অজগরে পরিণত হতো। তিনি হাত দিয়ে ধরলে তা আবার লাঠিতে পরিণত হতো।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম জ্বলন্ত আগ্নিকুণ্ডে নিরাপদে ও আরামে থাকলেন। হজরত সালেহ আলাইহিস সালাম পাথর থেকে উট বের করে জাতিকে দেখালেন। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জামা পিতার চোখে লাগানোমাত্র তার পিতা বারো বছরের হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন।

হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের হাতে লোহা হয়ে যেত কাঁদা মাটির মতো নরম। বাতাস হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালামকে তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো স্থানে নিয়ে যেত।

কোনো মানুষের পক্ষে তার স্বাভাবিক মানবীয় শক্তি দ্বারা এগুলো করা সম্ভব নয়। মানবীয় শক্তি এখানে অক্ষম। মহান আল্লাহতায়ালা তাদের এ সব মুজেযা দান করেছিলেন। এ সব মুজেযা ছিল কর্মগত।

কিন্তু আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহতায়ালা অসংখ্যা কর্মগত মুজেযার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক মুজেযাও দান করেছিলেন। যা পূর্ববর্তী কোনো নবীকে তিনি প্রদান করেননি। এ মুজযার নাম কোরআনে কারিম।

কোরআনে কারিম ভাষা ও ভাষার অলঙ্কার শাস্ত্রের মুজেযা। কারণ, কোরআন অবতরণের সময়টা ছিল আরবি সাহিত্যের সোনালী যুগ। সাহিত্য রচনা ছিলো আরবদের সামাজিক মর্যাদার অন্যতম উপাদান। বড় বড় কবিতা রচনা করে তারা বিশ্ববাসীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতো। মাণোত্তীর্ণ কবিতাগুলো তারা কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতো। কেউ পারলে এর সমকক্ষ কবিতা রচনা করে দেখাক! সাহিত্য প্রতিযোগিতা ও সাহিত্য প্রতিভার সে যুগে কোরআনে কারিম অবতরণ করে তাদের প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন আল্লাহতায়ালা। বলা হয়, কোরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নয়, একটি আয়াত নয়- পারলে যে কোনো একটি বাক্যের সমমানের একটি বাক্য রচনা করে দেখাও!!

পবিত্র কোরআনে কারিমের আয়াত শোনে বিশ্বসেরা আরব কবি সাহিত্যিকরা বিষ্ময়াভূত হলো। এর সাহিত্য মান ও অলঙ্কারের সামনে নত স্বীকার করলো। তারা অকপটে স্বীকার করলো, এ মানের সাহিত্য রচনা করা মানব ক্ষমতার বাইরে। তাই মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে কারিম সর্ব শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা।

পূর্ববর্তী নবীদের মুজেযাসমূহ ছিলো তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ তারা নেই। তাদের মুজেযাও নেই। পূর্ববর্তী কোনো নবীকে আজকের কেউ যদি অস্বীকার করে তবে সে নবীর কোনো মুজেযা প্রমাণস্বরূপ পেশ করা যাবে না। কিন্তু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ দুনিয়াতে না থাকলেও তার শ্রেষ্ঠ মুজেযা কোরআনে কারিম দুনিয়াতে আছে। আজ ও আগামীতে কেউ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে অস্বীকার করে; তবে তার মুজেযা কোরআনকে তার নবী হওয়ার প্রমাণস্বরূপ পেশ করা যাবে। পবিত্র কোরআন নিজেই অস্বীকারকারীকে বলবে, আমার যে কোনো একটি বাক্যের সমমানের বাক্য রচনা করো।

মুজেযার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো- কোনো জাতি যদি তার নবীর মুজেযার সঙ্গে বিরোধিতা ও শত্রুতায় লিপ্ত হয়; তবে আসমানি গজব তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেয়। পূর্ববর্তী বিভিন্ন নবীদের উম্মতের ওপর গজব তখনই এসেছে; যখন তারা তাদের নবীর মুজেযার সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছিলো।

শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠ মুজেযা কোরআন। কোরআন মানবজাতির আলোর দিশারী। মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার সার্বিক দিক নির্দেশনা। তাই এ উম্মত যদি কোরআনের বিরোধিতা করে। কোরআনি জীবন ব্যবস্থার বিরোধিতা করে। কোরআনের অর্থনীতি, বিচারনীতি, নারীনীতি, শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতির ইত্যাদির বিরোধিতা করে; তবে এ উম্মতের ওপরও আসমানি গজব আসবে। তবে এ উম্মত পূর্ববর্তী উম্মতদের মতো আসমানি গজবে সমূলে ধ্বংস হবে না। এটাও রহমাতুললিল আলামিনের বরকত।

এ উম্মত যখন কোরআরিন জীবন ব্যবস্থার বিরোধিতা করবে তখন বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি দ্বারা তাদের শাস্তি দেয়া হবে। আজ আমাদের বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা আল্লাহর গজব। কোরআন থেকে অনেক দূরে সরে পড়ায় প্রতিনিয়ত এ গজবের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ কোরআনের আনুগত্য করা। সামগ্রিক জীবন ও সমাজ ব্যবস্থাকে কোরআনের নির্দেশনার আলোকে ঢেলে সাজানো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এমএ

** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে
** সিরাত কাকে বলে?
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
**  ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।