ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

তাকদির নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নয়

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৬
তাকদির নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নয়

তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সাধারণত তাকদির বলতে আমরা বুঝি নিয়তি, অদৃষ্ট, বিধিলিপি, ভাগ্যের লিখন, কপাল, বরাত, কিসমত ইত্যাদি।

কথায় আছে, ভাগ্যের লিখন কে খন্ডাতে পারে?

তাকদিরের শব্দমূল হচ্ছে কদর। কদর বা কাদরুন শব্দের অর্থ হচ্ছে- পরিমাণ নির্ধারণ, পরিমাপ, পরিমিতি, মূল্যায়ন, নির্দিষ্ট সীমা, মূল্য নিরূপন, অদৃষ্ট, নিয়তি, ভাগ্য ইত্যাদি।

কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বের তার কোনো শরিক নেই। তিনি তাবৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে। ’ -সূরা ফুরকান : ২

কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তুমি তোমার মহান রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো, যিনি সৃষ্টি করেন ও সুঠাম করেন এবং যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেন ও পথনির্দেশ করেন। ’ -সূরা আলা : ১-৩

এসব আয়াত থেকে এটা সুষ্পষ্ট হয়ে যায় যে, সৃষ্টি জগতের মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা সব কিছুর প্রত্যেকটিকে এক নির্ধারিত পরিমাপে সৃষ্টি করেছেন এবং যে পরিকল্পনাধীনে ও যে উদ্দেশ্যে যা সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে সেই অনুযায়ী স্বভাবগুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এটা কোরআনে বলা হয়েছে এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। ’ -সূরা কামার : ৪৯

আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত নিয়মেই খাদ্যশস্যাদি, ফলমূল এবং অন্যান্য জিনিস উৎপন্ন হয়। এটাও তাকদিরের অন্তর্গত। এ ছাড়াও পৃথিবীতে যে বৃষ্টিপাত হয় এবং রাত আসে দিন যায়, দিন আসে রাত যায়- এ সবই আল্লাহর নির্দিষ্ট নিয়মে হয়।

পবিত্র কোরআনে কারিমে তাকদির সংশ্লিষ্ট অনেক আয়াত রয়েছে। হাদিসেও এ বিষয়ে প্রচুর আলোচনা আছে। তাকদির বিষয়ক এসব আয়াত ও হাদিসসমূহ পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাকদির হচ্ছে আল্লাহর বিশ্বজনীন নিয়মনীতি। এই নিয়মনীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার অধীনে বিশ্বজগত পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।

আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন- এই চেতনা লালন করা এবং তার বিধি ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই শান্তি। কোনো মঙ্গলজনক বা কল্যাণকর কিছু ঘটলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, আর অমঙ্গলজনক কিছু ঘটলে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং ধৈর্যধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য পাওয়ার ইচ্ছে প্রবল করতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল বা চেষ্টা-তদবির (কাজ) করে যেতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আল্লাহর বিধি ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট থাকার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই মনুষ্য মনে, নৈরাশ্যের বেদনাকে মুছে ফেলে আশার আলো জ্বালাতে হবে।

তাকদিরের সঙ্গে তদবিরের (চেষ্টা, কর্ম) কোনো সংঘাত নেই। তদবিরের ওপর দৃঢ়বিশ্বাস রেখে কাজ করে যেতে হবে। কার্য সম্পাদনের জন্য, সুফল ও কল্যাণ লাভের জন্য উপায়-উপরকণ ইত্যাদি অবলম্বনের মধ্যেই তদবিরের মর্ম নিহিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (মানুষ) ভালো যা উপার্জন করে তা তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে সেটাও তারই। ’ -সূরা বাকারা : ২৮৬

কোরআন মজিদে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না- যতক্ষণ না ওরা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। ’ -সূরা রাদ : ১১

আল্লাহতায়ালা মানুষকে ভালো-মন্দ, আলো-অন্ধকার, শুভ-অশুভ, গোনাহ-সওয়াব ইত্যাদি বিষয়ে বুঝার, জানার ও বিচার করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং অসৎ পথ থেকে ফিরে এসে সৎ পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত এমন সুযোগের অপব্যবহার করলে বিপদে পড়বে এবং আখেরাতে শাস্তিভোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ মানুষকে চিন্তা করার, কাজ করার শক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ স্বৈরাচার হয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে, অপকর্ম করবে, ধ্বংসের পথে নিজেকে ঠেলে দেবে, অশান্তি সৃষ্টি করবে।

ইসলামে যে সমস্ত বিষয়ের ওপর ঈমান আনয়ন অপরিহার্য করা হয়েছে তার মধ্যে তাকদিরও রয়েছে। তাকদির যে আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত এ দৃঢ়বিশ্বাস রাখতে হবে। মানুষ তাকদির রদ বা পরিবর্তন করতে পারে আল্লাহর দরবারে যথাযথভাবে দোয়ার মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই তাকদির রদ করতে পারে না এবং নেক আমল ছাড়া আর কিছুই বয়সে বৃদ্ধি ঘটায় না। ’ –তিরমিজি শরিফ

আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা তাকদির সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করছিলাম, এমন সময় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে আগমন করলেন। তিনি ভীষণ রেগে গেলেন, তার চেহারা মোবারক এমন লাল হয়ে গেল যে, তার দুই গালে যেন বেদানার নিংড়ানো রস মেখে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, এ বিষয়েই কি তোমরা নির্দেশিত হয়েছো? আর আমি কি এ নিয়েই তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তীরা যখন এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। আমি তোমাদের কঠোরভাবে বলছি, তোমরা এ নিয়ে আর তর্কাতর্কি করবে না। ’ –তিরমিজি শরিফ

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।