ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

অপরাধপ্রবণ ও নিষ্ঠুর মানুষ আল্লাহর অপছন্দ

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৬
অপরাধপ্রবণ ও নিষ্ঠুর মানুষ আল্লাহর অপছন্দ

গেল শুক্রবার বাদ জুমা দেশের প্রায় মসজিদেই শিশু হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ থেকে মুক্তি চেয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। সর্বত্র এখন আলোচনা এ বিষয় নিয়েই।

ফলে সহজেই আঁচ করা যায়, বর্তমান সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র।

পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন মায়ের কাছে সন্তানরা যখন অনিরাপদ হয়, প্রিয় মায়ের কোল যথন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়, গর্ভধারিনী মা তার ফটুফটে নবজাতককে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুড়ে মেরে ফেলে দেয় পাঁচ তলা থেকে, নাড়িছেড়া ধনকে যখন ঠেলে দেওয়া হয় কুকুরের মুখে, ফেলে রাখা হয় ডাস্টবিনে- অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে এসবই সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়।

সমাজজীবনে মানুষ কেন এমন জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে- সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব নৃশংসতার জন্য দোষী ব্যক্তিদের যথাসময়ে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারাকে দায়ী করছেন; একই সঙ্গে তারা ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়কেও দোষারোপ করছেন। যদিও সীমা লঙ্ঘনকারী মানুষকে সাবধান করে পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যখন তারা সীমা অতিক্রম করেছিল। স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের কাছে তাদের রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি। ’ -সূরা ইউনুস : ১৩

মানুষের অপরাধপ্রবণতা ও নিষ্ঠুরতা সমাজে আগেও ছিল। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এখন এটা ভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের পাশবিকতার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, তা এক দিনে তৈরি হয়নি। আগে কোনো অপরাধ করলে সমাজে জবাবদিহি করতে হতো। এখন দেখা যায়, অন্যায়-অপরাধ করে অপরাধীদের অনেকেই পার পেয়ে যায়। এতে মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। একজন নিরাশ মানুষ নিজের হতাশাকে কাটাতে, নিজের অপ্রাপ্তিবোধের তাড়না থেকে নিজের চেয়ে দুর্বল কাউকে বেছে নিয়ে তার ওপর হিংস্রতা দেখিয়ে একধরনের মানসিক পরিপূর্ণতা লাভ করতে চায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

পক্ষান্তরে মানুষ যখন দেখবে, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না, তখন অন্যায় পথে পা বাড়াতে সাহস পাবে না। তখন সমাজে অপরাধ করার প্রবণতা কমে আসবে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো অপরাধীর প্রতি মায়া-মমতা এবং সহানুভূতি যেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সুবিচার করতে বাধা প্রদান না করে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন (বিচারে) তোমরা কথা বলো, তখন ন্যায্য বলবে; যদিও (বিচারাধীন ব্যক্তি) নিকট-আত্মীয় হয়। ’ -সূরা আল আনআম : ১৫২

আদিম যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে নৃশংসতা ও বর্বরতা ছিল। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস চালানো হয়। এটা এখনও চলমান। অমানবিক আচরণ মানবজীবনে যেমন নিন্দনীয়, আল্লাহ ও রাসূলের কাছেও তা অত্যন্ত অপছন্দনীয় এবং কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যার স্বভাব-চরিত্র কলুষিত হয়, সে মানুষের মর্যাদা হারিয়ে পশুত্বের পর্যায়ে নেমে আসে। পক্ষান্তরে সুন্দর স্বভাব-চরিত্রই হচ্ছে সৎ কর্মের চালিকাশক্তি।

বর্তমানে অতিক্ষুদ্র ও তুচ্ছ কারণে সমাজে যত বীভৎস ঘটনা ঘটছে, কয়েক বছর আগে তা ছিলো না। তাই চলমান ঘটনাগুলোকে আলাদাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাদের মধ্যে ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ কম, তাদের এই বার্তা দিতে হবে, অপরাধ করলে ইহকাল ও পরকালে সাজা নিশ্চিত। এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক পার্থিব শাস্তি দেওয়া সম্ভব হলেই এসব অপরাধ কিছুটা হলেও কমে আসবে। যারা বিভিন্নভাবে সমাজের নানা ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন, তাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

আমরা মনে করি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইসলামের সাংস্কৃতিক বিকাশ জাগ্রত করে মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে পারলে সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ ছাড়া ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এমন আস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে জনগণ তাদের ওপর ভরসা রাখতে পারে। সমাজে কোনো অন্যায়-অপরাধ হতে দেখলে মানুষ দলগত প্রতিরোধ করবে, সে ধরনের প্রতিবাদমূলক মনোভাবও কমে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিক্ষক, সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম ও সমাজের নেতৃস্থানীয়দের সামাজিক অপরাধপ্রবণতা ও নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক আন্দোলনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, অদূর ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।


বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।