ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সমাজ সংস্কারে ইমাম-খতিবরা যা করতে পারেন

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
সমাজ সংস্কারে ইমাম-খতিবরা যা করতে পারেন

ইমাম আরবি শব্দ। শব্দটি মুসলিম সমাজের ব্যবহৃত একটি বহুল প্রচলিত শব্দ।

সর্বাধিক প্রচলিত অর্থে ইমাম হলেন ওই ব্যক্তি যিনি মসজিদে বা বাইরে জামায়াতে নামাজ পরিচালনা করেন। ক্ষেত্র বিশেষ ইসলাম বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ব্যক্তি বা উচ্চ পর্যায়ের আলেমকেও ইমাম হিসাবে সম্বোধন করা হয়।

ইমাম শব্দটি কোরআনে কারিমে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, সূরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতের ব্যবহার অনুযায়ী ইমাম অর্থ নেতা; সূরা হুদের ১৭ নম্বর আয়াতের ব্যবহার অনুযায়ী ইমাম অর্থ আদর্শ এবং সূরা ইয়াসিনের ১২ নম্বর আয়াতের অর্থ অনুযায়ী ইমাম অর্থ কিতাব।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি মহান দায়িত্ব। এটি সুন্দর ও সম্মানজনক পেশা। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ইমামতি করেছেন। তারপর তার সাহাবিরা ও খোলাফায়ে রাশেদিন ওই একই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইমামতির রয়েছে অনেক ফজিলত। হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন দুই শ্রেণীর মানুষ মেশকের তৈরি টিলার ওপর অবস্থান করবে-

ক. ওই গোলাম যে আল্লাহ ও তার মনিবের হক আদায় করেছে।
খ. এমন ইমাম যে কোনো সম্প্রদায়ের ইমামতি করছে, আর তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট।

আমরা জানি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানোর পর ইমামদের হাতে অফুরন্ত সময় থাকে। শহরের অধিকাংশ ইমাম এ সময় ভিন্ন পেশায় কর্মরত থাকলেও গ্রামের অধিকাংশ ইমাম এই মূল্যবান সময়গুলো চিরায়ত আলস্যের মধ্যে কাটান। অথচ তারা ইচ্ছা করলে এই সময়ে অনেক কিছু করতে পারেন। তাদের জন্য এমন অনেক কাজ করা সহজ, যা অন্যদের জন্য খুব কঠিন।

ইমামরা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের কথার প্রতি সাধারণ মানুষ খুব শ্রদ্ধাশীল। তাই তাদের যে কোনো সংস্কারমূলক কাজ করা যতটা সহজ, অন্যদের জন্য ততটা সহজ নয়। তারা সাধারণ মানুষের মন-মেজাজে প্রবেশ করতে পারেন। তাদের মনের কথাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারে।

ইমামদের জন্য প্রতি জুমাবার জনগণের একেবারেই কাছে চলে যাওয়ার, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। ইসলামের কথা, সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতির কথা জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জুমাবার একটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করে। ইমামরা এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সমাজ সংস্কারমূলক বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। সমাজের অসঙ্গতির কথা, বৈধ-অবৈধের কথা কোরআন-হাদিসের আলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারেন।

আমাদের দেশের ইমামরা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ পরকালীন মুক্তির ওয়াজ-নসিহতের মাঝে সীমাবব্ধ থাকতে চান। পার্থিব কর্মকাণ্ডের বিধি-বিধান সম্পর্কে সাধারণত তারা মুখ খুলতে চান না। অথচ ইসলামের বিধান শুধু নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলাম মানুষের সর্বক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত, ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন- সর্বক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। একজন ইমামকে যেমনিভাবে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে, তেমনিভাবে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ সম্পর্কেও জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে।

ইমামতির পাশাপাশি ইমামরা সমাজিক উন্নয়ন ও নিরক্ষরতা দূরীকরণেও ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করতে পারেন। ইসলামের সোনালী যুগে মসজিদভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। সাহাবায়ে কেরাম শিক্ষা অর্জনের জন্য মসজিদে নববীতে জড়ো হতেন। সেখানকার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং শিক্ষা সিলেবাস ছিল আল্লাহ প্রদত্ত অহি। অহির জ্ঞান অর্জন করে তারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।

ইসলামের সোনালী যুগে সমাজ পরিচালিত হতো মসজিদকে কেন্দ্র করে। বিচারকার্য পরিচালনা করা হতো মসজিদে। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান বিতরণ করা হতো মসজিদ থেকে। সেই ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। মসজিদকে আমরা ধর্মীয় তীর্থ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না। ইসলামকে আমরা শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। এর জন্য মসজিদের ইমামরাই বেশি দায়ী। ইমামরা শুধু ইবাতদের ওয়াজ-নসিহত করেন। মসজিদ থেকে এখন আর লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, সুদ-ঘুষের আলোচনা খুব একটা শোনা যায় না। অথচ এর দরকার বেশি।

সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ের আলোচনা না শুনতে না শুনতে এসব বিষয়কে ইসলাম বহির্ভূত বিষয় মনে করতে শুরু করেছে। তারা নামাজ-রোজা সঠিকভাবে আদায় করলেও লেনদেন, বিবাহ-শাদী ইত্যাদি বিষয়ে শরয়ী বিধি-বিধান জানারও প্রয়োজন বোধ করে না। বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামে একাধিক মসজিদ আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে একটি বিদ্যালয় নেই সেখানেও একাধিক মসজিদ আছে। মসজিদের ইমামরা যদি এসব বিষয় মানুষকে জানান তাহলে জনগণের অনেক ভুল ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে শুধু দরকার একটু সাহস ও প্রত্যয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।