ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পুরো বিসমিল্লাহ লিখুন, এটা সুন্নত ও বরকতময় আমল

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
পুরো বিসমিল্লাহ লিখুন, এটা সুন্নত ও বরকতময় আমল

অনেকেই ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এর পরিবর্তে বিসমিহিতায়ালা লেখেন। আবার অনেকে বিসমিল্লাহর সঙ্কেত বা বিকল্প হিসেবে ৭৮৬ ব্যবহার করেন বা লেখেন।

ইসলামি চিন্তাবিদদের অভিমত হলো, এভাবে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের পরিবর্তে বিসমিহিতায়ালা বা ৭৮৬ লেখা অনুচিত।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআন মজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। আর হাদিসের আলোকে আমরা এও জানি যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ব্যতীত অপূর্ণ ও বরকতশূন্য।

যেহেতু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআন মজিদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত, তাই এর মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। এর হুকুম কোরআন মজিদের অন্যান্য আয়াতের মতোই। তাই অজু ছাড়া তা স্পর্শ করা যাবে না। বিসমিল্লাহ লিখিত কাগজ কোনো অসম্মানের স্থানে ব্যবহার করাও জায়েয নয়।

সুতরাং বিভিন্ন দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন না থাকার দরুণ পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকার আশঙ্কা থাকে এমনকি অনেক সময় পদপিষ্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা থেকে বিরত থাকা উচিত। চাই তা আরবিতে লেখা হোক বা বাংলা উচ্চারণে।

এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) দেয়ালে বিসমিল্লাহ লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেঈ হজরত ইবরাহিম নাখঈ (রহ.) সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে।

হ্যাঁ, চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি ও লিখনির শুরুতে পুরো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা সুন্নত। আল্লাহর রাসূলের আমল ও সেই যুগ থেকে চলে আসা উম্মতের জন্য একটি অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা। এসব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

এ ছাড়া কোরআন মজিদে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর চিঠির আলোচনা এসেছে, যাতে বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করার কথা উল্লেখ রয়েছে। -সূরা নামল : ৩০

সুতরাং চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ লিখনির শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম লেখা সুন্নত। এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ যেমন ৭৮৬ লিখলে ওই সুন্নত আদায় হবে না এবং বিসমিল্লাহর সওয়াব পাওয়া যাবে না।

বিসমিহিতায়ালা লেখলে আল্লাহর নামে শুরু করার ফজিলত পাওয়া যাবে বটে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম লেখার সুন্নত আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, লিফলেট, পোস্টার বা এ ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে বিসমিল্লাহ না লেখাই ভালো। বরং তা লেখা শুরু বা ছাপানো শুরুর সময় শুধু মুখে বিসমিল্লাহ পাঠ করে নিলেই চলবে।

এক কথায়, পুরো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া বা লেখা একটি ইবাদত। এটা ইসলামের নির্দেশনা। ইবাদতের পদ্ধতি সেটাই অনুসরণ করতে হবে, যা কোরআন ও হাদিসে এসেছে। যেভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আদায় করেছেন ঠিক সেভাবে আদায় করাটাই সুন্নত। এর মধ্যে বাড়ানো বা কমানো কিংবা তার   আকৃতি পরিবর্তন করা নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ইসলামের একটি নিদর্শন। বিসমিহিতায়ালা বললে, আল্লাহ শব্দটিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। রাহমান ও রাহিম আল্লাহর দুটি সুন্দর নাম তাও অনুচ্চারিত থেকে যায়।

যেহেতু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআনের একটি আয়াত। এটা লিখলে বা পড়লে প্রতিটি হরফে ১০টি করে সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু এর পরিবর্তে বিসমিহিতায়ালা বললে ওই সওয়াব পাওয়া যাবে না। বিসমিহিতায়ালা বললে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলার সুন্নত আদায় হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘন্টা, মে ২৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।