ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রোজা কবুলের সহায়ক কিছু আমল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৬
রোজা কবুলের সহায়ক কিছু আমল

রমজান মাসে শুধু রোজা পালন করলেই চলবে না। রোজার উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

কীভাবে রোজা পালন স্বার্থক হতে পারে সে নিয়ে থাকছে বিশেষ পরামর্শ।

এক. পবিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ৩ ব্যক্তির প্রার্থনা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। তাদের মধ্যে একজন হলেন রোজাদার ব্যক্তি। ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। দিনভর নানা ব্যস্ততায় আমরা দোয়ায় নিমগ্ন হতে পারি না, এটাই অপ্রিয় বাস্তবতা। তাই অন্তত ইফতারপূর্ব মুহুর্তে দোয়ায় মশগুল থাকা উচিত। কারণ, এটি নানা কারণে দোয়ার জন্য আদর্শ সময়। সন্ধ্যার সময় দোয়া কবুল হয়, ইফতারপূর্ব মুহূর্তে দোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিদিন এ সময় জাহান্নাম থেকে বহু লোককে মুক্তির পরোয়ানা ঘোষণা করা হয়। অথচ তখন ইফতারের আয়োজনে আমরা এতটাই ব্যতিব্যস্ত থাকি যে, আজান পর্যন্ত আর নিরবে কিছু সময় আল্লাহর নিকট দোয়া ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকার ফুরসৎ হয় না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টির প্রতি সবার খেয়াল রাখা উচিত।

দুই. রমজান নেক আমলের বিশেষ মাস, এ মাসের শুরুতে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োজিত আহবায়ক সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে আমল ও ইবাদতে আরও অগ্রসর হওয়ার আহবান করে থাকেন। সুতরাং রুটিন আমলের পাশাপাশি রমজানের বিশেষ আমলগুলোর প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এ মাসেই বরং আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রুটিন আমল বাদ যায়। যেমন, আজানের জবাব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। মোয়াজ্জিন আজানের সময় যেসব বাক্য উচ্চারণ করেন, তার অনুকরণে সেগুলো বলা সুন্নত। সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মোয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তা বলো। ’ শুধু হাইয়্যা আলাস সালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার পর ‘লা- হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’ বলতে হবে। রমজানে আজানের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইফতারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজানের জবাব দেওয়ার কথা ভুলে যাই। যা কাম্য নয়। এ বিষয়েও বিশেষ যত্নশীল হওয়া দরকার।

তিন. তারাবির নামাজে তাড়াহুড়ো করা। আল্লাহর নিকট আমলের পরিমাণের চেয়ে গুণগত মান অনেক বেশি মুখ্য। নামাজের ব্যপারে একাধিক হাদিসে তাড়াহুড়ো না করার নির্দেশ এসেছে। অথচ আমাদের সমাজের সাধারণ চিত্র হলো রমজানে তারাবির নামাজে কেরাত পাঠ, রুকু ও সিজদা সবক্ষেত্রে খুব বেশি পরিমাণে তাড়াহুড়ো করা হয়। এতে আমলটির মান অনেক কমে যায়। অনেক সময় আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারায়।

চার. অনেকে ক্লান্তি কিংবা অলসতার কারণে তারাবির নামাজের দুই রাকাত পরবর্তী বিরতির পর ইমামের সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে নামাজের যোগ না দিয়ে বসে বসে ইমামের রুকুতে যাওয়ার অপেক্ষা করে থাকেন। ইমাম যখন রুকুতে যান, তখন জামাতে যোগ দেন। এটা ভুল প্রবণতা। রমজান হলো ইবাদতের মৌসুম। পেশাদার ব্যক্তিমাত্রই ক্লান্তি ও অলসতা উপেক্ষা করে সিজনের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করে। তবেই সে সফলতা অর্জন করতে পারে। নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- কিয়াম ও কেরাত। এ ব্যপারে উদাসীন থাকা বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়।

পাঁচ. অনেকেই কোনো বেরোজদার কিংবা নেক আমলে পিছিয়ে থাকা লোকদের দেখে নিজের আমল ও ইবাদত নিয়ে আত্মপ্রসাদ ও গর্ববোধ করে থাকেন। যা কোনো কোনো সময় নিজের আমলকে নষ্ট করে দেয়। সুতরাং এমন ক্ষেত্রে নিজের আমলে অহংকারী না হয়ে আল্লাহর দেওয়া তওফিকের কথা স্মরণ করে বরং শোকরগোজার থাকার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথা সব আমল বৃথা হয়ে যাবে।

ছয়. রমজানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো শেষের দশ দিন। সহিহ বোখারির বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দশ দিনে ইবাদতের জন্য যতোটা সাধনা করতেন জীবনের অন্য কোনো সময় ততটা করতেন না। এই দশকে তিনি নিজে কোমর বেঁধে আমল শুরু করতেন এবং পরিবারের লোকদেরও ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। অথচ আমরা প্রথম দুই দশকের তুলনায় শেষের দশকে বেশি গাফেল হয়ে পড়ি। ঈদের কেনাকাটা এবং অন্যান্য ব্যস্ততায় এই মূল্যবান দশকে আমরা ইবাদতের ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলি। রমজান সাধনা স্বার্থক করতে হলে এই দশককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করতে হবে।

সাত. হরজত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমৃত্যু প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। -সহিহ বোখারি

এখনতো আমাদের সমাজের সবচে অবহেলিত আমলে পরিণত হয়েছে ইতিকাফ। শবেকদর প্রাপ্তি ও শেষ দশকের ইবাদতে পরিপূর্ণভাবে মশগুল থাকার আশায় যেখানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের প্রতিটি বছর ইতিকাফ করতেন, সেখানে আমরা বেশিরভাগ লোক জীবনে এই আমলটি একবারও করতে পারি না।

রমজানের বিশেষত্ব হলো, এ মাসে শবেকদর রয়েছে, আর শবেকদরেই কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি ইতিকাফ করেন, তবে তিনি শবেকদরে রাত জেগে ইবাদত করতে না পারলেও শবেকদর লাভের মর্যাদা অর্জন করবেন।

আট. রমজানের শেষে ফিতরা নামক বিশেষ সদকা বা দানের নির্দেশ করেছেন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর এই সদকার দু’টি উদ্দেশ্য তিনি বর্ণনা করছেন। একটি হলো (ঈদ উপলক্ষে) দরিদ্রদের অন্নদান, অপরটি হলো ফিতরা রোজাদারের কথা ও কাজে অনর্থকতা ও ভুল-ত্রুটির কাফফারার ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ রোজাকে বিশুদ্ধ করে। -সুনানে আবু দাঊদ

ফিতরা আদায়ে আমাদের দু’টি ত্রুটি বেশ লক্ষণনীয়। প্রথমটি হলো, সময়মতো সদকাতুল ফিতর না দেওয়া। সদকাতুল ফিতর আদায়ের মূল সময় হলো, ঈদের চাঁদ দেখার পর হতে ঈদের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত। এর পর আদায় করলে সেটা নিছক সাধারণ দানে পরিণত হবে। সদকাতুল ফিতর আদায় হবে না। অথচ অনেকেই এটা ঈদের পর আদায় করে থাকেন। এটা ভুল আমল।

এমন আরো বেশ কিছু বিষয় আছে, যা সিয়ামকে স্বার্থক করতে হলে বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের সিয়াম ও রমজানের সাধনা যদি যথাযথভাবে হয়, তবেই সাধিত হবে সিয়ামের মূল লক্ষ্য-তাকওয়া অর্জন। আর তবেই আশা করতে পারবো বেহেশতের বিশেষ গেইট ‘রাইয়ান’ দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ, অন্যথা নয়।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সিয়াম ও রমজান সাধনাকে কবুল ও স্বার্থক করুন। আমিন।

লেখক: প্রিচার অ্যান্ড ট্রান্সলেটর, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি সেন্টার, সৌদি আরব

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘন্টা, জুন ১২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।