ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রমজানে সৌদি আরবে চলে সহমর্মিতা ও কল্যাণকর কাজের প্রতিযোগিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
রমজানে সৌদি আরবে চলে সহমর্মিতা ও কল্যাণকর কাজের প্রতিযোগিতা ছবি: সংগৃহীত

মক্কা-মদিনার দেশ সৌদি আরবে রমজান মানেই ঈদের আনন্দ। এখানে রমজান মাসের চাঁদ উঠতেই শুরু হয় একে অন্যের কল্যাণ কামনা করে ক্ষুদেবার্তা বিনিময়।

শহরগুলো সাজে নতুন সাজে। বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড এবং পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন লেখা। ঘরবাড়ি সংস্কার এবং ধোঁয়ামোছা হয়। আমরা ঈদের আগে যা যা করি সৌদিয়ানরা রমজানের শুরুতে ঠিক তাই করেন। দান-দক্ষিণার নিরব প্রতিযোগিতা চলে সৌদির বাসিন্দাদের মাঝে।

পবিত্র রমজান মাস এলে সৌদি আরবের দৈনন্দিনের রুটিনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। দিনের কোলাহল থাকে রাতভর। বেশিরভাগ লোক রমজানের রাতে ঘুমায় না। দোকান-পাট, শপিংমল, হোটেল-রোস্তোঁরাসহ অনেক অফিস-আদালতও সারা রাত খোলা থাকে।

সৌদিয়ানরা রোজার সময় সাধারণতঃ ফজরের পর থেকে জোহর পর্যন্ত ঘুমায়। যেহেতু হাদিসে রমজানের ইবাদত-বন্দেগি করে কল্যাণ অর্জনের কথা বলা হয়েছে, সে হিসেবে বলা চলে, কল্যাণকামীরা জেগে থাকেন রাতে ইবাদতের জন্য।

রোজাদারকে ইফতার করানোর ঐতিহ্যবাহী সৌদি সংস্কৃতি রমজান মাসের সবচে’ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। রোজাদারকে ইফতার করানোর জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং মসজিদে মসজিদে স্থাপন করা হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষ তাঁবু। বছর জুড়ে যেসব ভিনদেশী শ্রমিকরা সৌদিয়ানদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন, রমজান মাসে এসব তাঁবুতে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। মেহমান হয়ে বসে থাকে বাঙালি, ইন্ডিয়ান ও অন্যান্য দেশের রোজাদার শ্রমিকরা। আর খাদেমের মতো তাদের সামনে ইফতার বিতরণের কাজটি করছে সৌদিয়ানরা।

রোজাদারের সেবার নিমিত্তে বহু তাঁবু ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক উদ্যোগে স্থাপন করা হয়। আরও মজার বিষয় হলো- কোন তাবু কে স্থাপন করেছেন তা জানার কোনো উপায় নেই। সবাই নিজের দান গোপনে করতে স্বচেষ্ট। অনেক বেসরকারি এনজিও ট্রাফিক সিগনাল ও চেকপোস্টগুলোতে ইফতার বিতরণের ব্যবস্থা করেন।

রোজাদারদের ইফতার করানোর সবচে’ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায় মদিনায়। বিশেষ করে মসজিদে নববীর আশপাশে। ক্ষুধার্ত মানুষ যেমন লোভনীয় খাবারের দিকে ছুটে বেড়ায়, মদিনার মানুষেরা ঠিক সেভাবে ছুটোছুটি করেন রোজাদরকে নিজের দস্তরখানে বসানোর জন্য। মহান রবের সন্তষ্টি অর্জন ও মানবসেবার প্রতিযোগিতার সে এক অপূর্ব দৃশ্য।

সৌদি আরবে শেষ দশকে মসজিদগুলোতে তারাবির নামাজের পর দুই ঘন্টা বিরতি দিয়ে শুরু হয় কিয়ামুল লাইল। সাহরির পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে তা। এ সময় মাইক থেকে ভেসে আসা সুমধুর কন্ঠের তেলাওয়াতের সূরের মূর্ছনা গোটা শহর মুখরিত করে রাখে। শেষ রাতে আল্লাহভীরুদের কান্নার রোল যেকোনো পাষাণকেও কোমল হতে বাধ্য করে। ঈদের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত এমন জান্নাতি পরিবেশ বজায় থাকে।

রমজানে আমাদের দেশে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু সৌদি আরবের সুপার মার্কেটগুলোর দৃশ্যপট সম্পূর্ণ উল্টো। বিভিন্ন কোম্পানি মুদি ও গ্রোসারি আইটেমে ছাড় দিয়ে থাকে।

রমজানের তারাবি ও কিয়ামুল লাইলের মনোমুগ্ধকর তেলাওয়াত, রোজাদারকে ইফতার করানোর নয়ন জুড়ানো দৃশ্য এবং পরস্পর সহমর্মিতা ও কল্যাণকর্মে প্রতিযোগিতা দেখে সৌদিতে প্রতি বছর বহু অমুসলিম শ্রমিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে শ্রমিকদের রমজান মাসে ডিউটি কমিয়ে দেওয়া হয়। এমনিতে সৌদিতে প্রতি মাসের বেতন-ভাতা মাস ফুরানোর আগেই ২৫ তারিখে পরিশোধ করা হয়। তবে রমজান মাসে তা আরও এক ধাপ এগিয়ে ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।

রমজান মাস উপলক্ষে প্রচুর কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। অভাবীদের ঘরে ঘরে খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া হয়। এভাবে পুরো রমজান জুড়ে সৌদি আরবের সমাজে চলতে থাকে কল্যাণ ও মহৎকর্মের নানামুখি আয়োজন ও প্রতিযোগিতা।

লেখক: প্রিচার এন্ড ট্রান্সলেটর, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি সেন্টার, সৌদি আরব

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।