ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ খুশি হন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৬
বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ খুশি হন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য পরীক্ষা বলে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। ফলে এখন যারা বন্যার্ত এবং যারা বন্যা থেকে নিরাপদে আছেন- উভয়ের জন্যই তা পরীক্ষা বটে।

বন্যার্তদের পরীক্ষা হলো- ধৈর্য ও সবরের পরীক্ষা। যদি তারা বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে পতিত হয়েও ধৈর্যধারণ করেন আল্লাহতায়ালা তাদেরকে সুউচ্চ মর্যাদা ও পুরস্কারে ভূষিত করবেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। (হে রাসূল) আপনি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ প্রদান করুন। ’ -সূরা অাল বাকারা: ১৫৫

আর যারা বন্যার্ত হননি তাদের পরীক্ষা হলো- সাধ্যমতো বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার। অন্যে বিপদে সমব্যাথী হয়ে সাহায্যের হাত বাড়ানোর। সর্বশেষ পাওয়া খবরমতে দেশের ১৯টি জেলার লাখ লাখ মানুষ বন্যার্ত হয়েছেন। বানের পানিতে ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট সবই তলিয়ে গেছে। গবাদিপশুসহ অনেক মানুষেরও প্রাণহানি হয়েছে।

এমতাবস্থায় বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সঙ্গতিসম্পন্নদের ওপর আবশ্যকর্তব্য হয়ে পড়েছে। যারা বন্যাক্রান্ত হননি তারা বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মর্যাদা লাভ করতে পারেন। যারা তাদের এই দুঃখের দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করে তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করবে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে মহান পুরস্কারে ভূষিত করবেন। বন্যার্তদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে রিজিক দিয়ে সম্মানিত করবেন। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় দিবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে মহামহিম আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী শরাব পান করাবেন। ’ -আবু দাউদ: ২/১৩০

এ ছাড়া যাদের সামর্থ্য কম তারাও বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেন ত্রাণ, খাবার এবং ওষুধ বিতরণে সহযোগিতা করে। সামর্থ্যবান হওয়া সত্বেও অন্যের বিপদে এগিয়ে না অাসলে তার জন্য আল্লাহর দয়া সংকোচিত হয়ে যায়। নবী করিম (সা.) এক হাদিসে ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হয় না। -তিরমিজি: ৪/৩২৩

মানুষের মানবেতর জীবন দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে না আসলে এজন্য আল্লাহর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে জবে। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন (আদম সন্তানকে বলবেন) হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি... আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আপনি তো বিশ্বজগতের প্রভু। আমরা কীভাবে আপনাকে খাওয়াবো (এ সাধ্য তো আমাদের নেই)। আল্লাহ বলবেন, তোমার কি মনে নেই যে আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলো। তুমি তাকে খাবার দিলেই তো আমাকেই খাওয়ানো হতো। তুমি তা আমার কাছে ফেরত পেতে। আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আপনি তো বিশ্বজগতের প্রভু। আমরা কীভাবে আপনাকে পান করাবো (এ সাধ্য তো আমাদের নেই)। আল্লাহ তখন বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিলো; তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে- তাহলে তুমি তা আমার কাছে পেতে। -সহিহ মুসলিম: ৪/১৯৯০

লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।