ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

পবিত্র কোরবানির ইতিহাস ও ফজিলত

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৬
পবিত্র কোরবানির ইতিহাস ও ফজিলত ছবি: সংগৃহিত

কোরবানি শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত আরবি ভাষার একটি শব্দ। অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, সান্নিধ্য লাভ করা।

যেহেতু কোরবানির বাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে- বিধায় এটাকে কোরবানি বলে। কোরবানি যখন একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার নিমিত্তে হবে তখন এ কোরবানি নাজাতের কারণ হবে। পক্ষান্তরে যদি উদ্দেশ্য ভিন্ন হয় যথা, লোক দেখানো কিংবা গোশত খাওয়া তখন তা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চিন্তা অবাস্তব। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘অর্থাৎ আল্লাহর নিকট কোরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, কেবল তোমাদের আন্তরিকতা বা তাকওয়া পৌঁছে। ’ -সূরা হজ : ৩৭

কোরবানির প্রচলন হয় আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকে। তখনকার নিয়মানুযায়ী দু’টি করে সন্তান হতো- এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পরে ছেলে দ্বিতীয় পরে কন্যার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হতো। বিয়ে নিয়ে আদম (আ.)- এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাঝে দ্বন্দ্ব হলে আল্লাহর ফয়সালার ব্যাপারে হজরত আদম (আ.) তার দুই সন্তানকে আহবান জানান। আল্লাহতায়ালা দুই সন্তানকে কোরবানি করার নির্দেশ দিলে তারা দুই পাহাড়ের চূড়ায় নিজেদের কোরবানির বস্তু রেখে আসে। তখনকার নিয়মানুযায়ী যার কোরবানি কবুল হতো তার বস্তু আসমান থেকে আগুন এসে ঝলসে দিতো; ফলে তার কোরবানি কবুল হয়েছে বলে প্রমাণিত হতো। এভাবেই হাবিলের কোরবানি আগুন এসে ঝলসে দিলে তার কোরবানি আল্লাহ কবুল করেছেন বলে নির্ধারিত হয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘আর আপনি পাঠ করুন তাদের নিকট আদমের দুই সন্তানের ঘটনা যখন তারা দু’জন কোরবানি উপস্থিত করলো তখন আল্লাহ তাদের একজনের কোরবানি গ্রহণ করলেন এবং অপরটা গ্রহণ করলেন না। ’ -সূরা মায়িদা : ৩৪

এটাই কোরবানির সূচনালগ্ন। পরে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে বর্তমান নিয়মে কোরবানির প্রচলন হয়। সেটাও ছিল কঠিন পরীক্ষার ঘটনা। সংক্ষিপ্ত বিবরণ হচ্ছে এই যে, হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘরে তার বার্ধক্য বয়সে আল্লাহ একটি পুত্রসন্তান দান করেন, তার নাম ছিল হজরত ইসমাইল (আ.)। একদা হজরত ইবরাহিম (আ.) নির্দেশপ্রাপ্ত হন তিনি যেন প্রিয় বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি প্রথমে ১০টি উট আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে পরের রাতে একই স্বপ্ন পুনরায় দেখতে পেয়ে তিনি ১০০টি কোরবানি করেন। তৃতীয় রাতে একই স্বপ্ন দেখলে তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার প্রিয় বস্তু পৃথিবীতে একমাত্র তার সন্তান ইসমাইল। হয়তো তাকেই কোরবানি করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন।  

এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি তাকে একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। সে যখন পিতার সঙ্গে হাঁটা চলার উপযোগী হলো। তিনি (ইবরাহিম) বললেন, হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কী? সে (ইসমাইল) বললো, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর ইচ্ছায় ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। অতঃপর যখন তারা দু’জন একমত হলো- তাকে আহবান করলাম, হে ইবরাহিম! তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছ। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের বিনিময় দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল স্পষ্ট একটি পরীক্ষা। অতঃপর আমি তাকে দান করলাম একটি মহা কোরবানির পশু। ’ -সূরা সাফফাত : ১০১-১০৯

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর একটি মহান আদর্শ হলো- কোরবানি। যা আজও আমরা শ্রদ্ধাভরে পালন করে থাকি। সুতরাং কোরবানি করা এটা সুন্নতে ইবরাহিমি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানিকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘(হে নবী!) আপনি আপনার প্রভুর উদ্দেশে নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি করুন। ’ -সূরা আল কাউসার

কোরবানি যেহেতু মুসলিম জাতির একটি ঐতিহ্য। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলের কতিপয় সাহাবা রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলো কোরবানি কী? তিনি বললেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিমের সুন্নত। তারা বললো, এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? তিনি বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি। তারা বললো, ভেড়ারতো অসংখ্য পশম থাকে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে, যদি তা কোরবানি করে। -ইবনে মাজাহ

মানুষ আল্লাহকে কতটুকু ভালবাসে তার একটি পরীক্ষা হয়ে যায় এ কোরবানি দ্বারা। কারণ কোরবানির সূচনাই হয়েছে তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে। হজরত ইবরাহিম (আ.) তার সন্তানকে কোরবানি করতে আল্লাহ কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি বরং স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়েছেন। তিনি তাকওয়ার চরম শিখরে পৌঁছেছেন বলেই স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেননি।

কোরবানি করার ফলে মানুষে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। কেননা মানুষ তার প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকে। পরকালে এর সওয়াব পাবে এমন আশা থেকেই এ মহৎ কাজটি সম্পাদন করে থাকে। এক হাদিস থেকে জানা যায় যে, তিনি বলেছেন, হে মানুষ সকল! তোমরা ভালো ও ত্রুটিমুক্ত প্রাণী কোরবানি করো কেননা জান্নাতে যাওয়ার বাহন হবে এগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** কোরবানির আগে-পরে কি করবেন, কি করবেন না
** কোরবানির প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে কিছু জরুরি কথা
** বাংলাদেশে ঈদুল আজহা ১২ সেপ্টেম্বর!
** পবিত্র জিলহজ মাসের আমলসমূহ
** পবিত্র কোরবানি ও ঈদুল আজহা বিষয়ক কয়েকটি হাদিস​
** কোরবানি সংক্রান্ত অতি প্রয়োজনীয় কিছু মাসয়ালা​
** কোরবানির পশু বিষয়ক জরুরি মাসয়ালা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।