ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

পাহাড়ি গয়াল দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
পাহাড়ি গয়াল দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীনকাল থেকেই গয়াল একটি বন্য প্রাণী। পাহাড় অঞ্চলে এর বসবাস হওয়ায় এবং দেখতে অনেকটাই গরুর মতো হওয়ায় গয়াল আমাদের দেশে পাহাড়ি গরু বা বন গরু নামেই বেশি পরিচিত।

বিশ্বব্যাপী আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষে এবং গোশত আমদানি করে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করার লক্ষে পৃথিবীর অনেক দেশই খাবার উপযোগী বন্য পশুর বাণিজ্যিক আবাদ শুরু করেছে। বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও কিছুদিন পূর্বে এ দেশের বন বিভাগ পাহাড়ি গয়ালের নাম বন্য পশুর তালিকা থেকে কেটে দিয়েছে। সে সুবাদে এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড়ি গয়ালের বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয়েছে।

সারাবছর এর বেশ বেচাকেনাও হয়ে থাকে। গৃহপালিত গরুর তুলনায় গয়ালের গোশত বেশি হওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিত্তশালীদের কাছে কোরবানির জন্য দিন দিন গয়ালে চাহিদা বাড়ছে। আর তাই সারাবছরের তুলনায় কোরবানির হাটে গয়ালের বিক্রিও অনেকটাই বেড়ে যায়।

কিন্ত জনসাধারণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, গয়ালের কোরবানি শুদ্ধ হবে কিনা। কেননা, কোরবানি একটি ইবাদত। যা করা হয়ে থাকে কেবলমাত্র আল্লাহতায়ালাকে রাজি খুশি করার জন্য। অন্যান্য ইবাদতের মতো কোরবানির জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধান। এ সব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজের খেয়াল খুশিমতো কোরবানি দিলে কোরবানি হবে না- তা সহজ ও সুস্পষ্ট একটি কথা। এটা ইসলামের বিধানও বটে।

পবিত্র কে‍ারআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে প্রদান করেছেন, তার ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে নিজেরা আহার করো এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। ’ –সূরা হজ : ২৮

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি; সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। ’ –সূরা হজ : ৩৪

উল্লিখিত দু’টি আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝে আসে কোরবানির পশু হতে হবে গৃহপালিত প্রজাতিভুক্ত। কোরবানি ও হজ সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে কোরবানি যোগ্য যেসব পশুর নাম পাওয়া যায়- তার সবগুলোই গৃহপালিত পশু।

উক্ত আয়াতদ্বয় এবং এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর ভিত্তিতে প্রাচীনকালের ইসলামিক স্কলাররা মত ব্যক্ত করেছেন যে, কোরবানির শুদ্ধ হওয়ার জন্য পশু গৃহপালিত প্রজাতির হওয়া শর্ত। কোনো বন্য পশু দিয়ে কোরবানি করলে তা শুদ্ধ হবে না। ফিকাহ শাস্ত্রের বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বলা হয়েছে, ‘কোনো বন্য পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। যদি বন্য ও গৃহপালিত পশুর সংমিশ্রণে কোনো পশুর জন্ম হয় তবে তার হুকুম নির্ধারণের জন্য মা পশু ধর্তব্য হবে। যদি মা পশু বন্য হয় এবং পিতা পশু গৃহপালিত হয় তবে তা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। ... আর যদি এমন কোনো বন্য হরিণ দিয়ে কোরবানি করা হয়- যাকে পোষ মানানো হয়েছিল অথবা এমন কোনো বন্য গরু দিয়ে কোরবানি দেওয়া হয় যাকে লালন-পালন করা হয়েছিল তবুও সে কোরবানি জায়েজ হবে না।

অতএব, উপরোক্ত আয়াতের বাহ্যিক অর্থ ও ইসলামিক স্কলারদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বলা যায়, সরকার ও বন বিভাগ কর্তৃক পাহাড়ি গয়ালের আবাদ ও বাজারজাতের অনুমতি থাকা সত্বেও, বন্য পশুর তালিকা থেকে গয়ালের নাম কেটে দেওয়া হলেও এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকালয়ে তা আবাদ হলেও পাহাড়ি গয়াল দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। তবে কোরবানি ব্যাতীত তা জবাই করে খাওয়া জায়েজ। অর্থাৎ গয়ালের গোশত জায়েজ কিন্তু কোরবানি জায়েজ নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** কোরবানির আগে-পরে কি করবেন, কি করবেন না
** কোরবানির প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে কিছু জরুরি কথা
** বাংলাদেশে ঈদুল আজহা ১২ সেপ্টেম্বর!
** পবিত্র জিলহজ মাসের আমলসমূহ
** পবিত্র কোরবানি ও ঈদুল আজহা বিষয়ক কয়েকটি হাদিস​
** কোরবানি সংক্রান্ত অতি প্রয়োজনীয় কিছু মাসয়ালা​
** কোরবানির পশু বিষয়ক জরুরি মাসয়ালা
** পবিত্র কোরবানির ইতিহাস ও ফজিলত
** লোক দেখানোর জন্য নয়, কোরবানি হোক আল্লাহপ্রেমে
** কোরবানির গোশতেও রয়েছে প্রতিবেশীর অধিকার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।