ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্বের প্রাচীন গ্রন্থাগারে রয়েছে উটের চামড়ায় লেখা পবিত্র কোরআন

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
বিশ্বের প্রাচীন গ্রন্থাগারে রয়েছে উটের চামড়ায় লেখা পবিত্র কোরআন ছবি: সংগৃহীত

মরোক্কোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রাচীন নগরী ফেজের পুরনো এলাকার খিজানাত আল-কারায়িইন (Khizanat al-Qarawiyyin) বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থাগার। বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক পাণ্ডুলিপি সুরক্ষিত আছে এখানে, যা কখনোই দেখার সুযোগ হয়নি বর্তমান যুগের মানুষের।

এ গ্রন্থাগারটি ফের চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মরোক্কো সরকারের পক্ষ থেকে।

নবম শতাব্দীতে ফাতিমা আল ফিহরি নামে এক বিদুষী নারী এ গ্রন্থাগারটি স্থাপন করেন। তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান অঞ্চল থেকে ফেজ শহরে আসা এক ধনী ব্যবসায়ীর মেয়ে ছিলেন ফাতিমা। সে সময় একই সাথে কারায়িইন গ্রন্থাগার, কারায়িইন মসজিদ ও কারায়িইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

কারায়িইন বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। মুসলিম মনীষী ইবনে খালদুন, ইহুদি দার্শনিক মোসেস মাইমোনডেসের মতো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু কয়েক শতাব্দী আগে এ গ্রন্থাগারটি বন্ধ হয়ে যায়।

গ্রন্থাগারের প্রবেশমুখে লোহার ভারী দরজা। দরজার গায়ে চারটি প্রাচীন ও অত্যন্ত মজবুত তালা, যার প্রত্যেকটি তালার চাবি থাকত আলাদা চার ব্যক্তির কাছে। দরজা খোলার সময় তাদের চারজনকে একসাথে উপস্থিত থাকতে হতো। দরজার পাশ দিয়ে একটি লম্বা করিডোর। এ করিডোরটি দিয়ে যাওয়া যেত পাশের কারায়িইন মসজিদে। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান ছিল প্রাচীন ফেজ নগরীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র।

কয়েক বছর আগে গ্রন্থাগারটি ফের চালু ও এর প্রাচীন সংগ্রহগুলো উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখানে স্থাপিত হবে একটি ল্যাব, যেখানে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো সংরক্ষণ ও ডিজিটালাইজ করার কাজ চলবে। এ ছাড়া পাণ্ডুলিপিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আর্দ্রতা শোষণ করার জন্য ভূগর্ভস্থ একটি নালা তৈরি হবে। স্থাপন করা হবে বিশেষ স্ক্যানার যা পাণ্ডুলিপির গায়ের অনুসম ছিদ্রগুলো খুঁজে বের করবে এবং তা মেরামত করবে।

এ পাঠাগারের সবচেয়ে দামি বইগুলোর মধ্যে একটি নবম শতাব্দীতে উটের চামড়ার ওপর লেখা কুরআন শরিফ। এ ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন কোরআনসহ চার হাজারেরও বেশি দুর্লভ পুস্তক ও পাণ্ডুলিপি রয়েছে।

ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এসব মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য। সাধারণের জন্য পাঠাগারের একটি অংশ উন্মুক্ত থাকলেও এসব মূল্যবান সামগ্রী প্রাচীনকালের মতোই নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে রাখা হবে।

২০১২ সালে আজিজা চাওনি (Aziza Chaouni) নামে এক নারী স্থপতির প্রতিষ্ঠান গ্রন্থাগারটি মেরামতের দায়িত্ব পায়। সেই থেকে তিনিই এটির কেয়াটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এটি দর্শকদের জন্য খুলে দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আজিজা।

আজিজার নিজের পরিবারেরও একটি স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ গ্রন্থাগারের সাথে। প্রাচীনকাল থেকে এ গ্রন্থাগারটি জ্ঞানপিপাসু লোকদের কাছে খুবই আপন বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। আজিজার পরদাদা উনিশ শতাব্দীতে বহু দূরের এক গ্রাম থেকে খচ্চরের পিঠে চেপে কুরাওইইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন। সেই ইতিহাস স্মরণ করে আজিজা বলেন, ‘এ গ্রন্থাগারটি ছিল তার দ্বিতীয় বাড়ি। এর একটি অপূর্ব ক্ষমতা আছে মানুষকে আকৃষ্ট করার। ’

গ্রন্থাগারটি ফের চালু করা নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত আজিজা। তিনি বলেন, ‘আশা করি এটা শিগগিরই চালু হবে। প্রথমবারের মতো দর্শকেরা প্রাচীন ও বহুমূল্যবান পাণ্ডুলিপিগুলো দেখার সুযোগ পাবেন। ’

রাবাত মরোক্কোর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার আগে ফেজ শহরটিই ছিল দেশটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। সংস্কারকার্যক্রমে সেই বিষয়টিকে আবারো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রন্থাগার ছাড়াও শহরের বিভিন্ন অংশের উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ আবারো এখানে আসতে উৎসাহ বোধ করে।

চলতি বছরই গ্রন্থাগারের মূল্যবান সামগ্রীগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা ইতিহাস প্রেমিদের।

-গার্ডিয়ান অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।