ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

প্রবীণদের অসম্মানকারীরা মহানবীর দলভুক্ত নন

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৬
প্রবীণদের অসম্মানকারীরা মহানবীর দলভুক্ত নন

হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন বান্দা যখন চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন আল্লাহতায়ালা তার হিসাব-নিকাশ সহজ করে দেন। যখন ষাট বছরে উপনীত হন, তখন আল্লাহ তাকে আল্লাহভীরুতা দান করেন।

যখন সত্তর বছরে উপনীত হন, তখন আসমানের অধিবাসীরা তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। যখন তিনি আশি বছরে উপনীত হয়, আল্লাহ তখন তার ভালো কাজগুলোকে সুবিন্যস্ত করে দেন এবং তার খারাপ কাজগুলোকে মিটিয়ে দেন। আর যখন তিনি নব্বই বছর বয়সে উপনীত হন, তখন আল্লাহতায়ালা তার আগে-পরের সব গুনাহ মাফ করে দেন এবং তার পরিবারের জন্য সুপারিশ করার অধিকার প্রদান করেন এবং আসমানে তার নামের সঙ্গে লেখা হয় এই বান্দা পৃথিবীতে আল্লাহর জন্য আবদ্ধ। ’ -মুসনাদে আহমদ

এ হাদিস থেকে আমরা প্রবীণদের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান ও ভূমিকা সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারি। অতএব বয়সে বড় ও প্রবীণদের মর্যাদা দেওয়া আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব।

পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবীণদের অবদান অপরিসীম। তাই তাদের সব সময় শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হবে। তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হলে আগামী প্রজন্মও আমাদের মূল্যায়ন করবে।

হাদিসে বর্ণিত আছে, একদা একজন সাহাবি মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আমার বৃদ্ধ-অচল মাকে কাঁধে নিয়ে উত্তপ্ত মরুভূমি পাড়ি দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাবে বললেন, তোমার মা তোমার জন্মের সময় যে কষ্ট ভোগ করেছেন, সে তুলনায় তুমি খুব কমই করেছ। ’

বর্ণিত হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুরুব্বিদের প্রতি দায়িত্ব পালনে আমাদের সর্বক্ষণিকভাবে তৎপর থাকা অবশ্য কর্তব্য। প্রবীণরা আমাদের সমাজেরই মানুষ। তাদের অশেষ অবদানে সমাজ-সংসারের সৃষ্টি, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সমাজে সবাই প্রতিষ্ঠিত। তাই সমাজের শীর্ষস্থান তাদেরই প্রাপ্য। তাই কোনো প্রবীণ অবহেলা-নির্যাতনের শিকার যেন না হন। কোনো সন্তান যেন তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ঝামেলা মনে না করে নিজ ঘরে রেখে তাদের সেবা যত্নের ব্যবস্থা করেন সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এটাই ইমান, ইসলাম ও মানবতার দাবি।

মনে রাখতে হবে, সমাজ ও সংসার তখনই সুন্দর ও সুখময় হয়ে উঠবে, যখন প্রবীণরা নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারবেন। আর প্রবীণদের অধিকার রক্ষায় ইসলামি দর্শনই যথার্থ। কেননা, আল্লাহর নির্দেশ, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তোমাদের সামনে তাদের একজন বা উভয়েই যদি বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের প্রতি ‘উহ্’! শব্দটি উচ্চারণ করবে না। তাদের সঙ্গে কর্কশ ভাষায় কথা বলবে না। তাদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে বিনয়ের বাহু প্রসারিত করে দিবে। আর তাদের সম্পর্কে বলবে, হে প্রভু! তাদের ওপর সদয় হোন। যেমন শিশুকালে তারা আমাদের প্রতি সদয় ছিলেন। -সূরা বনি ইসরাইল: ২৩-২৪

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, ‘পিতামাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ময়লায় ফেলে রাখবে না... ক্ষোভ দেখাবে না অপমানসূচক কথা বলবে না....। ’ তাদের ঋণ শোধ করবার নয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মা সন্তানকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছেন। সুতরাং... সে যেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। -সূরা লোকমান: ১৪

বৃদ্ধ ও অসুস্থ পিতা-মাতার সেবা-সন্তুষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিই আল্লাহর সন্তুষ্টি। ’ -জামে তিরমিজি

হাদিসে আরও বলা হয়েছে, প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘যে প্রবীণদের সম্মান করে না, সে আমার দলভুক্ত  (উম্মত) নয়। ’ –সুনানে আবু দাউদ

বয়স্কদের প্রতি সম্মানের তা‍ৎপর্য প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃদ্ধকে তার বয়সের কারণে সম্মান করলো, আল্লাহতায়ালাও অন্যের দ্বারা তার সম্মান করাবেন। ’ –সুনানে আবু দাউদ

সমাজের প্রবীণরা আমাদের কারো না কারো বাবা-মা। তাহলে তাদের প্রতি এমন অবহেলা কেন? আসলে পিতা-মাতা সম্পর্কে কোরআনে কারিমের নির্দেশনা যথাযথভাবে না মানার কারণেই সমাজে আজ প্রবীণরা অবহেলিত হচ্ছে। ইসলাম তথা কোরআন-হাদিস পিতা-মাতার যে অধিকার দিয়েছে এর মাধ্যমেই প্রবীণরা তাদের অধিকার পেয়েছে। পিতা-মাতা সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের সেই নির্দেশনা না মানার কারণেই সমাজে প্রবীণরা আজ অবহেলিত হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে বলা যায়, সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে পারলেই কেবল প্রবীণদের অধিকার নিশ্চিত হবে, অন্যথায় নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।