ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হতাশায় শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
হতাশায় শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি ছবি: সংগৃহীত

মানবতার ধর্ম ইসলাম হতাশা ও নিরাশাকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। হতাশা ও নিরাশা হলো শয়তানের বৈশিষ্ট্য।

‘হতাশা বা নিরাশা’র বিপরীতে ‘আশা’ হলো নবী-রাসূল ও আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্তদের বৈশিষ্ট্য। দুনিয়ায় যতো নবী-রাসূল এসেছেন, তাদের প্রত্যেকেই কঠিন বিপদ মাথায় নিয়েও আপন আপন পথে অটল ছিলেন। হতাশা কখনও তাদের গ্রাস করেনি, পথরোধ করতে সক্ষম হয়নি।

হতাশা প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ -সূরা জুমার : ৫৩

আশার কারণে মানুষ বেঁচে থাকে। আশা মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তির চাকাকে সচল রাখে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে আশা না থাকলে মানুষ অসামাজিক জীবে পরিণত হয়। আশা সফলতার মূল চাবিকাঠি।

মনে রাখা প্রয়োজন, আশা ঈমানের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। তাওয়াক্কুলের প্রবল বিশ্বাস ছাড়া মানুষ আশা করতে পারে না। অর্থাৎ আশা তাওয়াক্কুল থেকে আর তাওয়াক্কুল করা যায় তখনই যখন ঈমান প্রবল হয়। হতাশা এমন এক ক্ষতিকর মন্দ গুণ, যা মানুষের সর্বপ্রকার যোগ্যতাকে সমূলে বিনষ্ট করে দেয়। শারীরিকভাবে মানুষের জীবনীশক্তিকে বিনাশ করে দেয়। পেশাগত জীবনের কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টি করে নানা জটিলতা। সামনে চলার পথকে করে রুদ্ধ।

হতাশা সফলতার প্রধান শত্রু। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা কখনও সফলতার মুখ দেখতে পায় না। পৃথিবীর সফল মানুষেরা কখনও হতাশাকে তাদের কাছে ভিড়তে দেননি। হতাশা আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের বেলায়ও অবহেলা প্রকাশ করতে বাধ্য করে। এমনকি একপর্যায়ে নিজের ব্যর্থতার জন্য আল্লাহকে দোষারোপ করতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে না। সে মনে করে ওই সফলতার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চেয়ে সে-ই যথোপযুক্ত ছিল। তাকে না দিয়ে অন্যায় করা হয়েছে। ফলে সে তার পারিপার্শ্বিক সব কিছুকেই দোষারোপ করতে থাকে এবং সবার সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং সামাজিকভাবে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আল্লাহ রহমতের ব্যাপারে তার মধ্যে সংশয় দানা বেঁধে ওঠে। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। ’ হতাশা ক্ষতি ছাড়া কোনোই কল্যাণ বয়ে আনে না।

হতাশা নামক এই নিরব ঘাতককে দূর করার জন্য প্রথমত, আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বেশি বেশি করে কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন করতে হবে। কারণ কোরআনে কারিমে আশার কথা বেশি বেশি বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। ’ -সূরা বাকারা : ১৫৩

ধৈর্য হতাশা রোগের একটি কার্যকরী প্রতিষেধক। ধৈর্য সফলতার সিঁড়ি। সর্বপ্রকার বিপদ অপসারণের জন্য এক মহৌষধ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সবর অপেক্ষা উত্তম ও ব্যাপক দান কাউকে দেওয়া হয়নি। ’ –মিশকাত

ধৈর্য মানুষের মধ্যে কতগুলো ব্যতিক্রমধর্মী গুণ সৃষ্টি করে। সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করা ধৈর্যশীলদের একটি বিশেষ গুণ এবং এটি একটি ইবাদতও বটে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করা সর্বোত্তম ইবাদত। ’ –মিশকাত

মুমিন বান্দাগণ কোনো কিছু না পেলে অপেক্ষা করে, ধৈর্যধারণ করে, কোনো প্রকার হা-হুতাশ করে না, কোনো অভিযোগ উত্থাপন করে না। বরং আল্লাহর কাছে নীরবে তার কথা বলে শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে এবং শিগগিরই কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি লাভ করে। কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি লাভ না হলেও কোনো পরোয়া নেই। উভয় অবস্থায় প্রশান্তি লাভ করে।

ইসলাম মনে করে, যারা কষ্টে ঘাবড়ে যায়, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং আপত্তি-অভিযোগ উত্থাপন করে, তাদের সফলতা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে হতাশা যখন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে, তখন এক দিকে আল্লাহর অবাধ্য বান্দায় পরিণত হয়, অন্য দিকে তার শারীরিক ও মানসিক বিকৃতি ঘটে। এ বিকৃতি থেকে বাঁচার জন্য হতাশাকে অবশ্যই নিজে থেকে দূর করতে হবে। কল্যাণের পথে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা করার যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।