ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কিয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবেন প্রতিবেশীরা

মাহমুদা নওরিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
কিয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবেন প্রতিবেশীরা ছবি: প্রতীকী

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজরত জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়ে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বানিয়ে দেওয়া হবে।

প্রতিবেশী মানবসমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আর এ কারণে ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজরত জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়ে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বানিয়ে দেওয়া হবে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আজকাল এ বিষয়ে আমাদের মাঝে চরম অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে শহরের মানুষের মাঝে। বছরের পর বছর পার হয় পাশের বাড়ির কারো সঙ্গে কোনো কথা হয় না, খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না; বরং বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া হয়। অথচ প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ ও তাকে কষ্ট না দেওয়াকে ঈমানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে। -সহিহ মুসলিম

প্রতিবেশী দরিদ্র হলে?
প্রতিবেশী যদি দরিদ্র হয়, তাহলে এ বিষয়ে তার অধিকার আরও বেশি। কারণ দরিদ্রকে খানা খাওয়ানো যেমন অনেক সওয়াবের কাজ; তেমনি দরিদ্রকে খানা না-খাওয়ানো জাহান্নামে যাওয়ার একটি বড় কারণ। কোরআনে কারিমে ‘সাকার’ নামক জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে নামাজ না পড়ার বিষয়টির সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্রকে খানা না খাওয়ানোও গুরুত্বসহকারে উল্লেখিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, (জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করা হবে) কোন বিষয়টি তোমাদেরকে ‘সাকার’ নামক জাহান্নামে ঠেলে দিয়েছে? (তারা উত্তরে বলবে) আমরা নামাজ পড়তাম না এবং দরিদ্রকে খানা খাওয়াতাম না। -সূরা মুদ্দাচ্ছির: ৪২-৪৪

উপহার নিকটতম প্রতিবেশীকে আগে পাবে, যদিও সে অন্য ধর্মের হয়
প্রতিবেশীর মধ্যে যেমন আছে নিকট প্রতিবেশী, নিকটতম প্রতিবেশী ও তুলনামূলক একটু দূরের প্রতিবেশী তেমনি আছে মুসলিম ও বিধর্মী। উপহার প্রদান বা সামাজিকতা রক্ষায় কোনো কিছু দেওয়ার প্রয়োজন হলে উপহার নিকটতম প্রতিবেশীকে আগে দিতে হবে, যদিও সে অন্য ধর্মের হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার দুই প্রতিবেশী। এদের কাকে হাদিয়া দেব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে তোমার বেশি নিকটবর্তী। -সহিহ বোখারি

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, একবার আমি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর কাছে ছিলাম। তার গোলাম একটি বকরির চামড়া ছাড়াচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, তোমার এ কাজ শেষ হলে সর্বপ্রথম আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে দেবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ আপনার এসলাহ করুন। আপনি ইহুদিকে আগে দিতে বলছেন! তখন তিনি বললেন, (হাঁ) আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রতিবেশীর হকের বিষয়টি এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলতে শুনেছি যে, আমাদের আশংকা হয়েছে বা মনে হয়েছে, প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকার বানিয়ে দেওয়া হবে। -সহিহ বোখারি 

প্রতিবেশী হবেন আখেরাতের প্রথম বাদী-বিবাদী
প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট করা বা তাকে কষ্ট দেওয়া অনেক বড় অন্যায়। কখনও দুনিয়াতেই এর সাজা পেতে হয় আর আখেরাতের পাকড়াও তো আছেই। আপনার অর্থবল কিংবা জনবল আছে বলে আপনি প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট করে পার পেয়ে যাবেন- এমনটি নয়। হ্যাঁ, দুনিয়ার আদালত থেকে হয়ত পার পেয়ে যাবেন কিন্তু আখেরাতের আদালত থেকে আপনাকে কে বাঁচাবে? হাদিসে আছে, হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী। -মুসনাদে আহমাদ

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।