বলাবাহুল্য, কোরআন বা সুন্নাহর কোনো বর্ণনা ছাড়া কোনো মৃত ব্যক্তির রহমপ্রাপ্ত কিংবা জান্নাতি হওয়ার নিশ্চয়তা আমরা কেউ দিতে পারি না। সুতরাং যাদের জান্নাতি হওয়ার ব্যপারে কোরআন বা হাদিসে নিশ্চিত ও সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি; তাদের কাউকে মরহুম বলা যাবে না।
এই মত যারা পোষণ করেন, তাদের মধ্যে আল্লামা বিন বাযও (রহ.) রয়েছেন। অবশ্য তিনি তার ফতোয়ার শেষের দিকে বলেছেন, তবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের উলামায়ে কেরাম নেককারদের প্রতি জান্নাতের আশা ও সুধারণা পোষণ করেন এবং বদকারদের জন্য তার বিপরীত। এটা সূরা তওবার ৭২ নম্বর আয়াতের আলোকে তারা করে থাকেন।
ওই আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কানন-কুঞ্জের, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণ। তারা সেগুলোরই মাঝে থাকবে। আর এ সব কানন-কুঞ্জে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুতঃ এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হলো, মহান কৃতকার্যতা। ’
ফতোয়ার একেবারে শেষে এসে তিনি বলেন, তবে কোনো কোনো আলেমের মতে যে ব্যক্তির প্রতি কমপক্ষে দু’জন বিশ্বস্ত লোক ভালোর সাক্ষ্য দেয়, তাকে জান্নাতি বলে সাক্ষ্য দেওয়াতে অসুবিধা নেই।
আমি যে মতটিকে এ ক্ষেত্রে যথার্থ এবং সঠিক বলে মনে করি সেটা হলো- ইবনে উসাইমিনের (রহ.) মত। তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো মৃত ব্যক্তিকে এই অর্থে মরহুম বলে মন্তব্য করে যে, লোকটিকে আল্লাহতায়ালা নিশ্চিতভাবে ক্ষমা ও দয়া করেছেন, অথচ এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসের বর্ণনা নাই, তাহলে সেটা নিষিদ্ধ। তবে সচরাচর সমাজের মানুষ মৃত মুসলিমদের এই অর্থে মরহুম বলে না। বরং এটি দোয়া এবং নেক আশা হিসেবে বলে কিংবা বলা হয়।
তা ছাড়া রাহিমাহুল্লাহ (তার প্রতি রহম করা হয়েছে) এই বাক্যটি সংবাদমূলক; অথচ এটাকে দোয়ার অর্থে নেওয়া হয়- সংবাদ হিসেবে বলা হয় না। আর মরহুম (তিনি রহমপ্রাপ্ত) শব্দটিও সংবাদমূলক। সুতরাং সেটিও দোয়ার অর্থে ব্যবহৃত করতে নিষেধ নেই।
আর যেহেতু নিশ্চিতভাবে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে বা জান্নাতি হয়ে গেছে, এমন ধারণা থেকে কোনো মৃতকে মরহুম বলা হয় না। বরং দোয়া ও মুমিনের প্রতি সুধারণা থেকে মরহুম বলা হয়, সেহেতু এই অর্থে মরহুম বলাতে কোনো সমস্যা নাই।
লেখক: প্রিচার অ্যান্ড ট্রান্সলেটর, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি সেন্টার, সৌদি আরব
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এমএইউ/