পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন হলো মহান আল্লাহর বাণী। যা সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন।
কোরআনে কারিম স্পর্শ করা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘একে স্পর্শ করবে না তবে যারা পবিত্র শুধু তারাই। ’ এ আয়াতের ব্যাখ্যা দু’ধরণের।
তাফসিরে ইবনে কাসিরে উভয় ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনের স্বতন্ত্র বিশেষ বচননীতির আলোকে আয়াতের উভয় ব্যাখ্যাই সঠিক ও যথার্থ। একটি ব্যাখ্যা হলো- ঊর্ধ্বজগতে লৌহে মাহফুজে সংরক্ষিত কোরআনের নুরানি কপিকে ফেরেশতা ছাড়া কোনো জিন, শয়তান স্পর্শ করে না।
আরেকটি ব্যাখ্যা হলো- দুনিয়াতে গ্রন্থাকারে লিখিত কোরআনের দৃশ্যমান কপিকে শুধু তারাই স্পর্শ করবে যারা পবিত্র। এ দ্বিতীয় ব্যাখ্যার আলোকে আয়াতটি নিছক সংবাদ নয় বরং কোরআন স্পর্শ করা প্রসঙ্গে একটি বিধান। যা কোরআনের অন্যান্য বিধানের মতোই মুসলমানদের জন্য অবশ্যই পালনীয়। অতএব, যার ওপর অজু, গোসল ফরজ তার জন্য কোরআনে কারিম স্পর্শ করা জায়েয নেই।
কোরআন পাঠ প্রসঙ্গে মহানবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঋতুবতী নারী ও জুনুব ব্যক্তি (যার ওপর গোসল ফরজ) কোরআনের কিছুই পাঠ করবে না। ’ –সুনানে তিরমিজি: ১৩১
বিধানগতভাবে সুস্পষ্ট ভাষার এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হলেন ইসমাইল ইবনে আইয়্যাশ। তার স্মৃতিশক্তির বিষয়ে হাদিসবেত্তাদের কিছুটা আপত্তি অনেক বিজ্ঞ মুহাদ্দিস তাকে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার বিষয়ে কতিপয় আপত্তিকারকের আপত্তি মেনে নিলেও তার বর্ণিত এ হাদিসের বক্তব্য ও বিধান অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
কেননা, এ বক্তব্যের সমর্থনে সহিহ হাদিস আছে। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুব না হলে (গোসল ফরজ না হলে) যে কোনো অবস্থায় আমাদের কোরআন শোনাতেন। ’ এ হাদিসের গ্রহযোগ্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিসটি হাসান সহিহ।
হজরত আলী (রা.) আরও বর্ণনা করেন, একদা আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তিনি অজু করে কোরআন পাঠ করলেন। তিনি বললেন, এভাবে কোরআন পাঠ করবে সে ব্যক্তি; যার ওপর গোসল ফরজ নয়। কিন্তু যার ওপর গোসল ফরজ সে কোরআন পাঠ করবে না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুব অবস্থায় (গোসল ফরজ অবস্থায়) কোরআন তেলাওয়াত করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। ইমাম দারা কুতনি এ হাদিস উল্লেখ করার পর মন্তব্য করেছেন- এর বর্ণনাধারা গ্রহণযোগ্য।
ইমাম তিরমিজি তার সুনানে ১৩১ ও ১৪৬ নম্বর হাদিসের পরে মন্তব্য করেছেন অধিকাংশ জ্ঞানী সাহাবা ও তাবিয়িন অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াতকে নিষিদ্ধ মনে করতেন। সুফিয়ান সাওরি, ইবনুল মোবারক, শাফি ও আহমাদসহ পরবর্তী সময়ের ইসলামি স্কলাররাও মনে করতে ঋতুবতী নারী ও জুনুব ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নেই।
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন মাজহাবের মত উল্লেখ করতে যেয়ে জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ আলফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবাআতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানাফি ফেকাহবিদদের মতে, যার ওপর গোসল ফরজ তার জন্য কোরআন পাঠ করা হারাম। তা পরিমাণে সামান্যই হোক অথবা বেশি। তবে দুই অবস্থায় কোরআনের আয়াত পাঠ করা যায়। কোনো বিশেষ কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ পূর্ণ পাঠ করতে পারবে। যদিও তা কোরআনেরই আয়াত।
দোয়া করার জন্য অথবা কারও প্রশংসা করার জন্যে কোরআনের ছোট কোনো বাক্যাংশ পাঠ করা যাবে। ... শাফিয়ি ফেকাহবিদদের মতে, যার ওপর গোসল ফরজ তার জন্য কোরআন তেলাওয়াতের ইচ্ছায় কোরআনের একটি শব্দও পাঠ করা হারাম।
তবে এর দ্বারা শুধু জিকির উদ্দেশ্য হলে, অথবা অনিচ্ছায় মুখ থেকে উচ্চারিত হলে তা হারাম হবে না। যেমন, কোনো কাজের আগে বিসমিল্লাহ পূর্ণ বলা যাবে। গাড়িতে উঠে সুবহানাল্লাজি... শেষ পর্যন্ত বলা যাবে। ... হাম্বলি ফেকাহবিদদের মতে, যার ওপর গোসল ফরজ তার জন্য অতি ছোট আয়াত অথবা বড় আয়াতের অনুরূপ ছোট অংশ পাঠ করা জায়েয। এর চেয়ে বেশি হলে তা জায়েয হবে না। তবে কোরআনের যে সব আয়াত জিকিরের আয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ ও স্বীকৃত সেগুলো- সংশ্লিষ্ট কাজের সময় পাঠ করা যাবে।
সার কথা হলো- নারীর মাসিক ঋতুস্রাব হলে, সন্তান প্রসব পরবর্তী স্রাব হলে এবং নর-নারী যৌনমিলন করলে অথবা বীর্যপাত হলে পবিত্রতা লাভের পূর্বে কোরআন স্পর্শ করা যাবে না ও পাঠ করা যাবে না। তবে যে কোনো জিকির করা যাবে, তাসবিহ পাঠ করা যাবে এবং দোয়া-ইস্তেগফার করা যাবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমএইউ/