এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত, এ কথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে।
আল্লাহতায়ালা বান্দার এত কাছাকাছি অবস্থান করেন যে, কোনো প্রকার মাধ্যম ও সুপারিশ ছাড়া বান্দা সরাসরি সর্বত্র ও সবসময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কাছে আবেদন-নিবেদন পেশ করতে পারে। কোরআনে কারিমে বিষয়টি বলা হয়েছে এভাবে, ‘পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলে যা-ই আছে সবাই তার কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করছে। প্রতি মুহূর্তে তিনি নতুন নতুন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। ’ -সূরা আর রাহমান: ২৯
বস্তুত প্রত্যেক মানুষ ইচ্ছা করলে সব সময় তার কাছে আর্জি পেশ করতে পারে। কারণ তিনি সামিউম বাসির বা শ্রবণকারী ও মহাদ্রষ্টা। এমন কি মানুষ মনে মনে যা আবেদন করে তাও তিনি শুনতে পান। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মনের গোপন কথাও জানেন। ’ -সূরা ইমরান: ১১৯
মানুষের মনের কথা শুধু শুনেই থাকেন তা নয়- বরং সে সম্পর্কে তিনি সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেন। আল্লাহতায়ালা গভীর ও প্রখর দৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি বান্দাদের কার্যাবলী, সঙ্কল্প ইচ্ছা পুরোপুরি ভালোভাবে জানেন। কারণ তিনি বাসিরুম বিল ইবাদ, তিনি লাতিফ বা সূক্ষ্মদর্শী। আল্লাহর জ্ঞান ও তার পাকড়াওয়ের বাইরে কেউ যেতে পারে না; যাওয়ার ক্ষমতা নেই।
কোরআনে কারিমের বহু স্থানে এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। কোথাও আল্লাহতায়ালাকে সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা, কোথাও সর্বোত্তম ক্ষমাকারী, সর্বোত্তম বিচারক, সর্বোত্তম দয়ালু, সর্বোত্তম সাহায্যকারী বলা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা মানুষের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। প্রতিটি প্রয়োজন, যা ব্যক্তির মনের গহিনে লুপ্ত আছে, যার বহিঃপ্রকাশ এখনও ঘটেনি, তাও তিনি জানেন। কারণ তিনি মহাজ্ঞানী, অতিশয় জ্ঞাত। তিনিই একমাত্র জানেন কোন জিনিসে মানুষের উন্নতি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কোন নীতিমালা, আইনকানুন ও বিধিনিষেধ আবশ্যক।
আল্লাহ আলিমুল গায়েব সব প্রকার অদৃশ্য বস্তুর জ্ঞান তিনি রাখেন। মানুষের মনের অন্ধকার কুঠুরিতে কী আছে, আল্লাহর কাছে তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। সুতরাং জ্ঞান ও বিজ্ঞতার দাবি হচ্ছে এই যে, যাকে বুদ্ধি-জ্ঞান দান করা হবে তাকে তার কাজের জন্য দায়ীও করা হবে। তার জ্ঞান ও বুদ্ধি কোন কাজে কিভাবে ব্যবহার করেছে তা মহাজ্ঞানীর নখদর্পণে আছে। সুতরাং জীবনের সব ধরনের প্রয়োজন, বাসনা, ইচ্ছা ও সাহায্য প্রার্থনা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
একজন মানুষের দুনিয়ার জীবনযাপনের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, বস্তুগত বা অবস্তুগত যত কিছুর অভাব বা প্রয়োজন হয়, সবগুলোরই প্রকৃত দাতা একমাত্র আল্লাহতায়ালা।
আল্লাহতায়ালা মানুষের বিপদের বন্ধু। সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক। সুতরাং বিপদে-আপদে আল্লাহর ওপর ভরসা ও বিশ্বাস রাখা উচিত। যার যা প্রয়োজন, তা মহান দাতা, পরম প্রভু, বিশ্বস্ত তত্ত্বাবধায়ক, অকৃত্রিম বন্ধু আল্লাহতায়ালার কাছেই চাওয়া উচিত।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এমএইউ/