গার্ডিয়ানে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের ইনভার্নেস শহর থেকে প্লাইমাউথ শহর পর্যন্ত এই তৃতীয় বার্ষিক ‘ভিজিট মাই মস্ক’ আয়োজনে অংশগ্রহণ করবে হাজার হাজার দর্শনার্থী। এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ মসজিদই ব্রিটেনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরগুলোতে অবস্থিত।
ইসলাম সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া ছাড়াও এই আয়োজনের আরও বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। আগ্রহী দর্শনার্থীদের কাছে ইসলামি বিশ্বাস, ইসলামের ইবাদত-বন্দেগির রীতি কিংবা প্রক্রিয়া-পদ্ধতি, মুসলমানদের প্রাত্যহিক জীবনে ইসলাম ধর্মের প্রভাব নিয়ে আলোচন ও ব্যাখ্যা করা হবে। এ সময় মসজিদগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত নানা সময়ের সামাজিক কাজের বিবরণ থাকবে। মসজিদের উদ্যোগে অভাবীদের মাঝে খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে গৃহহীনদের আশ্রয় প্রকল্প ও শরণার্থী সম্পর্কিত যেসব সামাজিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সেসবের বিবরণ ও প্রদর্শনী হবে। যেমন গত রমজানে বৃটিশ মুসলমানরা দাতব্যখাতে প্রায় ১০ কোটি ইউরো দান করেছেন।
সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিক ও সকল সিরীয় শরণার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধ করে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারি ও কানাডার কুইবেক শহরের একটি মসজিদে হামলা হওয়ার পরপরই এ বছরের এই আয়োজন করা হচ্ছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা এই আয়োজনটিকে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতির বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে।
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের মহাসচিব হারুন খান এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা ও কানাডার মসজিদে গণহত্যার ঘটনায় আমাদের জন্যে যে বিষাক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, সে পরিস্থিতিতে এই আয়োজন অতি প্রয়োজনীয় এক প্রতিষেধক। সকল ব্রিটিশ জনগণ, মুসলমান সম্প্রদায় ও অমুসলিম সবার এই আয়োজনে একসঙ্গে এসে নতুন মিত্রতার বন্ধন গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। তাই তিনি ব্রিটেনের নাগরিকদের ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
বিগত বছরে এমন আয়োজন ব্রিটেনের জনগণের প্রশংসা অর্জন করেছিল। এমনকি কেউ কেউ তাদের স্থানীয় মসজিদ খুঁজতে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন।
লিডস গ্র্যান্ড মস্কের একজন মুখপাত্র বলেন, ব্রিটেনে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের বৃদ্ধি নিয়ে আমরা চিন্তিত। তিনি আরও বলেন, ভিজিট মাই মস্ক দিবস- আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামিক বিশ্বাস সম্বন্ধে ধারণা লাভ করার একটি সুযোগ। বিশেষ করে অমুসলিমদের জন্যে। ইসলাম সম্পর্কে তারা যে জ্ঞান, ধারণা ও শিক্ষা লাভ করে তা খণ্ডিত। এখানে মসজিদে আসলে তাদের ভুল ভেঙে যাবে।
দ্য ইয়র্কশায়ার ইভনিং পোস্ট পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই মুখপাত্র বলেন, ভিজিট মস্ক কর্মসূচি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
ওলভার হ্যাম্পটনের বিশপ ক্লাইভ গ্রেগরি বলেন, তিনি দু’টি স্থানীয় মসজিদ পরিদর্শন করবেন। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে দেয়াল না গড়ে সংযোগ গড়ে তোলা উচিত। আর ভিজিট মাই মস্ক দিবস সংযোগ স্থাপনের জন্যে একটি চমৎকার সুযোগ। ফলে আমি স্থানীয় খ্রিস্টানদের অনুরোধ করবো; তারা যেন এতে অংশগ্রহণ করেন এবং স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে বন্ধন আরও জোরদার করেন।
গ্লুচেস্টারশায়ার ইসলামিক ট্রাস্ট মস্কের প্রতিনিধি সাইদ হ্যান্সদট বলেন, এমন আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সবাইকে এটা দেখাতে ও জানাতে চাই যে, আমরা তাদের চেয়ে ভিন্ন নই। আমরা কোনো ভিনগ্রহের বাসিন্দা নই। আর এই জায়গাটা (মসজিদ) হচ্ছে আমাদের প্রার্থনা করার জায়গা। এখানে অন্যকিছু হয় না।
ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের নির্বাচনী এলাকার মেইডেনহেড মসজিদের মাওলানা জিয়া মহিউদ্দিন বলেন, তারা রোববার অগণিত দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানোর প্রত্যাশায় আছেন। গত বছরের জুন মাসে ও রমজানের সময় প্রধানমন্ত্রী মে এই মসজিদটি পরিদর্শন করেছিলেন।
মেইডেনহেডের সাপ্তাহিক স্থানীয় পত্রিকা দ্য মেইডেনহেড এডভার্টাইজারকে দেওয়া এক বক্তব্যে মাওলানা মহিউদ্দিন বলেন, যখন আমরা মসজিদের কোনো অনুষ্ঠান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পোস্ট করি, বেশিরভাগ সময় ৯০ শতাংশের মতো মানুষ পোস্টটি ইতিবাচক হিসেবে দেখে। তার পরও অজানা কারণে কিছু মানুষ আমাদের নিয়ে বাজে কথা বলে। ভিজিট মস্ক কর্মসূচি এই দূরত্ব কমিয়ে আনবে বলে আমি মনে করি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
এমএইউ/