হাশরের দিন প্রত্যেক মুসলমান অভিভাবককে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে। যে সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হবে তাকে ভোগ করতে হবে কঠোর শাস্তি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মানুষ ও নিরাকার জিন সৃষ্টির সম্পর্কে স্পষ্টাক্ষরে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি জিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য। ’ -সূরা যারিয়াত : ৫৬
এই পবিত্র ঘোষণার তাৎপর্য হচ্ছে জিন ও সৃষ্টির মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ নির্দেশিত পথ ও পন্থায় এবং নবী করিম (সা.)-এর পথ নির্দেশ ও উপদেশ অনুসারে কাজ করে পার্থিব জীবনযাপন করা।
আল্লাহর খাঁটি বান্দা হওয়ার একাধিক পর্যায় রয়েছে। প্রথমে কালেমা তায়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ প্রকাশ্যে মুখে বলে এবং আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে পবিত্র ইসলাম ধর্মের গণ্ডিভূত তথা মুসলমান হতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে, ইসলামি জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া। এর পরের পর্যায় হচ্ছে, পরহেজগার অর্থাৎ খাঁটি বান্দা হওয়ার জন্য তৎপর হওয়া।
এ পর্যায়ে উপনিত হওয়ার লক্ষণ হচ্ছে, পবিত্র কোরআন-হাদিসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিধানাবলী পালনে গাফিলতি করলে বা ব্যর্থ হলে লজ্জা ও অনুশোচনায় অধির হওয়া। আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করে তা যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তরিকভাবে লজ্জিত ও অনুতপ্ত না হলে- ঈমানের দৃঢ়তা থাকতে পারে না; এমনকি ঈমানহানিও ঘটতে পারে।
হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, লজ্জা ঈমানের একটি অঙ্গ। যার লজ্জা নেই তার ঈমান নেই। নামাজ মানুষকে পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। কোনো পাপ কাজে শামিল হওয়ার প্রশ্ন দেখা দিলে তার মনে বিরাট ভীতির সঞ্চার হয়, যার ফলে তার পক্ষে পাপ কাজ করা সম্ভব হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ ব্যভিচার ও খারাপকাজ হতে মানুষকে রক্ষা করে। ’ -সূরা আনকাবুত : ৪৫
পরহেজগার লোকদের মধ্যে কোনো প্রকার অহমিকা-অহংকার, লোভ-লালসা, হীনমন্যতা ও আল্লাহর কোনো সৃষ্টির প্রতি অবহেলা-অবজ্ঞা থাকতে পারে না; তারা সেবামূলক কাজ করার জন্য থাকে উদগ্রীব। পরহেজগার বান্দাদের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিকতর প্রিয়, যে অধিকতর পরহেজগার। ’ -সূরা হুজরাত: ১৩
হাদিসে কুদসিতে পরহেজগারদের সৌভাগ্য সম্পর্কে যে আশার বাণী শুনানো হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। সেখানে বলা হয়েছে যে, আমি আমার নেককার খাঁটি বান্দাদের জন্য এমন সব নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কেউ কখনও চোখে দেখেনি, কানে শুনেনি, যা তাদের ধারণা বহির্ভূত। নামকাওয়াস্তে মুসলমান আল্লাহর কাম্য নয়, তিনি চান পুরোপুরি মুসলমান। তিনি সবার প্রতি উদ্বাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা পুরোপুরিভাবে ইসলাম গ্রহণ কর, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কেননা সে তোমাদের ঘোর শত্রু। ’ -সূরা বাকারা : ২০৮
এখানে পুরোপুরি মুসলমান বলতে ঈমান, ধর্ম-কর্ম, লেবাস-পোশাক, সুরত, কর্তব্য পরায়নতা ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীত যে ধরনের বা যে জাতীয় লেবাস-পোশাক পরিধান করবে, হাশরের দিন তাদেরকে সে জাতীয় লোকদের সঙ্গে উঠানো হবে। অর্থাৎ ইসলামি পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করে জিন্দেগি কাটাবে তারা, পাপী-তাপী যাই হোক না কেন, হাশরের দিন মুসলমানদের দলভুক্ত হবে। যে অতীত জীবনের পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে খাঁটি মুসলমানের মতো জীবনযাপন করবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা শুধু ক্ষমা নয় তার বিগত জীবনের পাপাচারকে পুণ্যে পরিণত করে দিতে পারেন।
পবিত্র কোরআনে তওবাকারীদেরকে আশার বাণী শুনিয়ে বলা হয়েছে, যারা তওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকাজ (ধর্মীয় বিধান অনুসারে) করে, আল্লাহতায়ালার তাদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিণত করে দেন। আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু, তিনি তওবাকারীদের কে অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল হবো যে (সহিহ নিয়তে) তওবা করে, ঈমান আনে সৎ কাজ ধর্মীয় বিধান অনুসারে করে এবং সৎপথে থাকে অবিচলিত। -সূরা ত্বহা : ৮২
পবিত্র কোরআনে সৎপথে অবস্থানকারীদেরকে অভয় দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যারা সৎপথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি সামর্থ্য বাড়িয়ে দিবেন এবং তাদেরকে মোত্তাকি হওয়ার সৌভাগ্য দান করবেন। -সূরা মুহাম্মদ : ১৭
প্রসঙ্গত আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.) কে যখন পৃথিবীতে প্রেরণ করেন তখন তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীতে না জানি কতই-না দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে জীবনযাপন করতে হবেভ তদুত্তরে আল্লাহ বলেছিলেন, ‘পাথিব জীবনে যারা আমার প্রদর্শিত সহজ-সরল পথ অনুসরণ করবে, তাদেরকে আমি অভয় দিচ্ছি তারা কখনও দুর্দশাগ্রস্ত হবে না। ’ -সূরা বাকারা : ৩৮
অতএব, হতাশা ও নৈরাজ্যে হাবুডুবু না খেয়ে সময় থাকতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর শরণাপন্ন হয়ে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এমএইউ/