অনেকে তো মনেই করেন, জীবনাচারের বিবিধ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ইসলামে কোনো আলোচনা নেই। নামাজ-রোজা, দান-সদকা, জাকাত-হজ ইত্যাদির বাইরে অন্য কিছু করাকে ইবাদতও মনে করে না।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় মসজিদকে জীবন্ত করে রাখতেন। তার প্রিয় সাহাবিরাও মসজিদকে জীবন্ত করে রাখার কৌশল জানতেন। মসজিদ আলোকিত তখন হবে যখন মুসলিল্লরা গিয়ে সেখান থেকে হেদায়েতের শিক্ষা লাভ করবেন।
এখন তো প্রায়ই শোনা যায়, কোথাও কোথাও মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের কারণে দুঃখজনক হলেও সত্যি; সম্মানিত ঈমাম সাহেবরা অনেক সময় যা বলার তা বলতে পারেন না। মুসল্লিরাও অনেক বিষয় আছে যা তাদের জানা নেই তারা মসজিদে গিয়ে তা জানতে চান। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে তারা বলতে পারেন না কিংবা জানতে চান না।
সূরা জিনের ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্যই; সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে ডেকো না। ’ ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- যদি মসজিদে গিয়ে আল্লাহতায়ালার দাসত্ব করার কলাকৌশল মুসল্লিরা শিখতে পারেন তাহলে সর্বক্ষেত্রে তারা একমাত্র আল্লাহর কাছেই সমর্পিত হবেন। দুনিয়ার কাছে কখনোই তারা সমর্পিত হবেন না।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায় কয়েক দিন অবস্থান করেছিলেন। তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই মসজিদ নির্মাণকে গুরুত্ব দিতেন। নবী করিম (সা.) মসজিদে সাহাবিদের আলোকিত মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাদের সুখ-দুঃখের তিনি সাথী হয়েছিলেন। মসজিদকে তিনি হেদায়েতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিলেন।
মসজিদে এসে সাহাবিরা তাদের সুখ-দুঃখের কথা পরস্পরের সঙ্গে বলতেন এবং সমাধান পেতেন। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে বাড়িতে চলে আসা কারও সুখ-দুঃখের সাথী না হওয়া তখন সম্ভব হবে যখন মসজিদগুলোকে জীবন্ত করা হবে না।
সূরা বাকারায় আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ওই ব্যক্তির চেয়ে অপরাধী আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদে জিকির ও ইবাদত করতে বাধা দেয় এবং মসজিদকে বিরান করতে চেষ্টা করে। ’
এখন তো ঘড়ি ধরে রুটিন মতে শুধু নামাজের সময় মসজিদ খোলা হয়। বাকী সময় তালাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ নামাজের সময়ের বাইরে মসজিদগুলোকে এক ধরনের বিরান করে রাখা হয়। প্রয়োজনে, কোরআন তেলাওয়াত করতে, মাসয়ালা জানতে মসজিদে গেলে কারো কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না। মসজিদের এই বিরান পরিবেশের জন্য কোরআনের ভাষ্যমতে সবাইকে দায়ী হতে হবে।
আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণের কাজে অংশগ্রহণ করবেন আল্লাহতায়ালা তার কাজ অনুসারে বেহেশতের মধ্যে তার জন্য ইমারত নির্মাণ করে দেবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো মসজিদে অতি সামান্য পরিমাণ, বালু, সিমেন্ট, ইট, অর্থ অথবা কায়িক পরিশ্রম দ্বারাও সহযোগিতা করবে আল্লাহতায়ালা তাকেও পুরস্কৃত করবেন।
আরেক হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে মসজিদের আকর্ষণ থাকে সে আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবে।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজ পড়ার বিশেষ জায়গা তৈরি করার এবং তাকে পবিত্র রাখার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশ সর্বক্ষেত্রে তখনই প্রযোজ্য হবে যখন মসজিদ কমিটিতে পরহেজগার ব্যক্তিদের দ্বারা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেই সব ব্যক্তি কোরআনের আলোয় আলোকিত থাকবেন এবং মসজিদকে আলোকিত করতে পারবেন। আর সাধারণ মানুষ বিপদ-আপদে, প্রয়োজনে মসজিদে গিয়ে তার সমস্যার কাঙ্খিত সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবে।
এক কথায়, মসজিদ শুধু নামাজের স্থান হিসেবে নয়, মসজিদগুলো হয়ে উঠুক সামাজিক সব সমস্যার সমাধানের কেন্দ্র হিসেবে। যে কাজটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭
এমএইউ/