মাদরাসার নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর শীতকালে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও খাদেমুল ইসলাম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে ৮১তম বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর হেদায়েতি বয়ানের পর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এই মাহফিল। হেদায়েতি বয়ান ও দোয়া পরিচালনা করবেন সদর সাহেব (রহ.)-এর সাহেবজাদা গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন।
মাহফিলে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম ওয়াজ-নসিহত পেশ করেন। তাছাড়া মাহফিলের বিশেষত্ব হলো- মাহফিলে আগত মুসল্লিদের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতসহ ইসলামের অন্যান্য বিধান বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে শেখানো হয়।
মাহফিলে প্রতিবছরের মতো এবারও বিগত শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদিস, ইফতা, তাফসির, হিফজ ও কেরাত বিভাগ সমাপ্তকারী উত্তীর্ণ ছাত্রদের সম্মানসূচক পাগড়ি ও কৃতি ছাত্রদের পুরস্কৃত করা হবে।
বাংলাদেশের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গওহরডাঙ্গা মাদরাসার গোড়াপত্তন করেন রেনেসাঁ আন্দোলনের অগ্রদূত মোজাহেদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.)। সর্বমহলে তিনি ‘সদর সাহেব হুজুর’ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন আধুনিকমনা যুক্তিবাদী আলেম। ১৯২৭ সালে দেওবন্দের শিক্ষা সমাপ্ত করে মাওলানা সনদ লাভ করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এ দেশের মানুষকে ইসলামি দিকনির্দেশনা দিতে।
একে এক গড়ে তোলেন অগণিত মসজিদ, মাদরাসা, খানকা, সামাজিক সংগঠন ও অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। গজালিয়া মাদরাসা, ঢাকার বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদরাসা, জামেয়া কোরআনিয়া লালবাগ মাদরাসা, জামেয়া এমদাদিয়া ফরিদাবাদ মাদরাসা, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদরাসা তার অসামান্য কীর্তির এক ঝলকমাত্র। তিনি শতাধিক গ্রন্থও রচনা করেছেন। হক্কানী তাফসীর সদর সাহেব হুজুরের এক অমূল্য রচনা।
১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গওহরডাঙ্গা মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এটি সমাজের বহুমুখী সেবা করে যাচ্ছে। বর্তমানে মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন সদর সাহেব (রহ.)-এর সাহেবজাদা পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন।
গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মাহফিলের কারণে টুঙ্গিপাড়া আজ অন্যতম ধর্মীয় তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ এই মাহফিলে অংশ নিয়ে থাকেন। এলাকাবাসীর কাছে এই মাহফিল শুধু একটি ধর্মীয় অনুষঙ্গ নয়, বরং সামাজিকভাবেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। কারণ এ মাহফিলকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে ঈদের আমেজ বিরাজ করে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মেহমানদারিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭
এমএইউ/