দুনিয়ার কোনো চিকিৎসকের পক্ষে মানুষের সব অঙ্গের বিশেষজ্ঞ হওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি অঙ্গের জন্য স্বতন্ত্র চিকিৎসক রয়েছে।
মানুষের অসংখ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্য থেকে মাত্র দুটি অঙ্গের হেফাজতের জিম্মাদারি কোনো ব্যক্তি গ্রহণ করলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জান্নাতের জিম্মাদারি গ্রহণ করেছেন। তবে এই অঙ্গ দুটি কোনো বড় অঙ্গ নয়, বরং অত্যন্ত ছোট। এক. জিহ্বা। দুই. লজ্জাস্থান।
হজরত সাহাল ইবনে ইবনে সাআদ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের দুই চোয়ালের মধ্যস্থ অঙ্গ এবং দুই রানের মধ্যস্থ অঙ্গ হেফাজত করবে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার। ’ –সহিহ বোখারি: ৬৪৭৪
জিহ্বা ছোট হলেও মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটিকে সচল রাখার জন্য মহান আল্লাহ এক বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছেন। ওই ব্যবস্থা না থাকলে মানুষ জিহ্বাকে কোনো কাজেই লাগাতে পারতো না। জিহ্বাকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি সেটিকে সবসময় আর্দ্র রাখেন। আহার, নিদ্রা, জাগরণ ও কথাবার্তাসহ জীবনের শুরু থেকে শেষ দিনটি পর্যন্ত সর্বাবস্থায় পরিমাণমতো পানির সরবরাহ করে তিনি এই জিহ্বাকে আর্দ্র করে রাখেন। আর এজন্য আমাদের ভিন্ন কোনো কসরত করতে হয় না। যদি জিহ্বাকে আর্দ্র রাখার জন্য আমাদের আলাদা কসরত করতে হতো- তাহলে সেটা মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক বিষয় হতো।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- মানুষ যেন নিজের জবান দিয়ে মহান আল্লাহকে ডাকতে পারে, তার জিকির করতে পারে এই জন্য আল্লাহতায়ালা নিজের বান্দাদের জবান সর্বদা আর্দ্র-সতেজ রাখেন। শুষ্ক জিহ্বা দ্বারা কথা বলা যায় না। এ জন্য জিহ্বা আর্দ্র হতে হয়। তাই তিনি জিহ্বাকে আর্দ্র রাখেন। জিহ্বার এই আর্দ্রতা শুধু দুনিয়ার জীবনে নয়- মায়ের গর্ভেও আল্লাহতায়ালা মানুষের জিহ্বাকে আর্দ্র করে রাখেন এবং পবিত্র রাখেন।
মায়ের গর্ভে ভ্রুণের শরীরের পুষ্টির জন্য, শরীর বেড়ে ওঠার জন্য খাদ্য প্রয়োজন হয়। মায়ের গর্ভে খাবার বলতে রক্ত। আর স্বভাবতই রক্ত নাপাক। আল্লাহতায়ালা মায়ের পেটে রক্তের মাধ্যমে মানুষের পুষ্টির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ওই রক্ত ভ্রুণের শরীরে মানুষের স্বভাবগত খাদ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ মুখ দিয়ে পৌঁছে না বরং সে জন্য আল্লাহতায়ালা ভিন্ন ব্যবস্থা করেন। নাভির অন্ত্রের মাধ্যমে তা মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে পৌঁছে।
কারণ, মানুষ দুনিয়ার জীবনে নিজের মুখ দিয়ে মহান আল্লাহর পবিত্র নাম জপে। আল্লাহ জিকির করে তাই তিনি ওই স্থান দিয়ে নাপাক রক্ত প্রবেশ করান না।
আল্লাহতায়ালা যে জবানকে মায়ের গর্ভ থেকেই তার জিকিরে জন্য পূত-পবিত্র রেখেছেন, আমরা নিজেদের জীবদ্দশায় সেই পবিত্রতা কতটুকু রক্ষা করছি তা ভেবে দেখা দরকার। আমরা দিনে কতবার মিথ্যা, চোগলখুরি, গীবত, অশ্লীল কথা বলে নিজেরদের জবানকে নাপাক করছি তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? অথবা ক্রমেই আমাদের দিন ফুরিয়ে আসছে। আমরা আল্লাহতায়ালার জিকির করছি না। তাকে স্মরণ করছি না! মানুষ মুখের দ্বারা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বেশি গোনাহ করে।
হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলনা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, মানুষ ত্রিশ প্রকারেরও বেশি গোনাহ নিজের জবান দিয়ে করে থাকে। কত সময়ের অপচয় করে থাকে। চলার পথে কিংবা যানজটে নগরবাসীর অগনিত শ্রমঘণ্টা অবলীলায় ক্ষয়ে যায়। অথচ ইচ্ছা করলেই নষ্ট সময়গুলো মূল্যবান থেকে মহামূল্যবান করে তোলা যায়। শুধু জিহ্বা নেড়ে পরকালের সঞ্চয় বাড়ানো যায়।
দ্বিতীয় যে অঙ্গটির কথা হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, সেটি হলো- লজ্জস্থান। এটাও মানুষের একটি ছোট অঙ্গ। এই দুটি ছোট্ট অঙ্গকে যে ব্যক্তি গোনাহ থেকে বাঁচানোর জিম্মাদারি নেবে প্রিয় নবী (সা.) তাকে জান্নাতে নেওয়ার জিম্মাদারি গ্রহণ করবেন। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে মৃত্যু পর্যন্ত উল্লিখিত অঙ্গ দুটির গোনাহ থেকে বেঁচে থাকান তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুহাদ্দিস, ইমাম ও প্রাবন্ধিক
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭
এমএইউ/