এমন বক্তব্য ও আহ্বান সংবাদপত্রগুলোতে গুরুত্ব সহকারে ছাপা হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা, তা মোকাবিলায় আহ্বান জানানো কিংবা অভিযান, ধর-পাকড় চালানো খুবই স্বাভাবিক।
জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যক্তি বা পরিবার। সমাজে ভীতি-শংকাও বাড়ে। কিন্তু মাদক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে রীতিমত বিপর্যস্ত ও ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদকের আগ্রাসন ও বিস্তার সর্বগ্রাসী রূপ পরিগ্রহ করছে। সমাজের এমন কোনো শ্রেণী বা স্তর নেই যেখানে মাদক ঘাঁটি গেড়ে না বসেছে। রাজধানী শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। কর্ম, পেশা, বয়স নির্বিশেষে মানুষ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে কিশোর-তরুণরা অধিক সংখ্যায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। শহুরে বিত্তবানের সন্তান থেকে গ্রামের দীন-দরিদ্রের সন্তান পর্যন্ত মাদকাসক্তিতে আক্রান্ত। কে না জানে, শিশু-কিশোর-তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। একদিন তারাই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেবে। আজ মাদক আগ্রাসনে তারাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে মর্মান্তিক, বেদনায়ক ও উদ্বেগজনক আর কিছু হতে পারে না। মাদকের কারণে সমাজে খুন, ধর্ষণ, অনিরাপত্তা, বিশৃংখলা ও নানাবিধ অপরাধের বিস্তার ঘটছে। মাদকের কারণে খুনোখুনি, পারিবারিক অশান্তি, বিয়ে বিচ্ছেদ-বিপর্যয় যে কত ঘটছে- তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাদকের জন্য অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে মাদকাসক্তরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যে করছে না।
সহযোগী এক পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এর মধ্যে সিংহভাগই শিক্ষার্থী। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেওয়া এ তথ্য থেকে বুঝা যায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কতটা বিপর্যয়কর ও নাজুক হয়ে পড়েছে।
অনেকের ধারণা, মাদকাসক্তদের সংখ্যা বিশেষত, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও বেশি হবে। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের অধস্তন প্রজন্ম নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। মাদকের সহজলভ্যতা মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। রাজধানী থেকে গ্রাম, যেখানেই হাত বাড়ানো যায়, সেখানেই কোনো না কোনো মাদক পাওয়া যায়। দুষ্টুচক্রের সুনিয়ন্ত্রিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মাদক দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
আমরা এর আগেও বিভিন্ন উপলক্ষে বলেছি এবং এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, মাদকের অনুপ্রবেশ ও চলাচল রোধ করা ছাড়া এর দৌরাত্ম্য ও আগ্রাসন থেকে মুক্তি লাভের সহজ কোনো পথ নেই। মাদকের দরজা খোলা রেখে যদি বলা হয়, কেউ মাদক সেবন করবে না, সেটা কোনো কাজে আসবে না। অতএব, মাদক চোরাচালানী চক্রের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিতে হবে এবং মূল হোতাদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর এ দায়িত্ব নিতে হবে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে। মাদক ও মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানো গেলে মাদক নির্মূল সহজ হয়ে যাবে।
দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার দৈন্য উদ্বেগজনক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। অধিকাংশ কিশোর ও তরুণ মাদক সেবনে কোনো নৈতিক ও আত্মিক বাধা অনুভব করে না। শিক্ষা ব্যবস্থায় ও পরিবারে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। কাজেই, মাদকাসক্তকে সুবচন শোনালে, গ্রেফতার কিংবা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করলেই এ সমস্যার সমাধান হবে না। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি মাদকবিরোধী প্রচারণা, মাদকের বহুমুখী প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় স্বার্থেই জাতির ভবিষ্যৎ হিসাবে গণিত কিশোর-তরুণদের সুরক্ষা করতে হবে। যে কোনো কাজের চেয়ে এ কাজটি বড়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭
এমএইউ/