ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নিষিদ্ধ আকর্ষণ দূর করার উপায়

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৭
নিষিদ্ধ আকর্ষণ দূর করার উপায় নিজের জীবনের সব গোনাহের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং এ রোগ থেকে মুক্তিদানের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা

শিক্ষা, পেশা, যাত্রা ও বসবাসসহ বিভিন্ন উপলক্ষে একজন পুরুষ তার কাছের বা দূরের কোনো মেয়ের প্রতি প্রচণ্ডভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ দুর্বলতা যদি ক্ষণিকেই মুছে যায় তবে তো ভালো।

কিন্তু অনেক সময়ই এ দুর্বলতা মানসপটে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে। তখন তা মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাত্যাহিক সব কাজের গতিকে মন্থর করে দেয়। প্রতি মুহূর্তেই একটা অস্থিরতা ও কোনো কিছুই ভালো না লাগা তার মনকে পীড়িত করতে থাকে। ভালো-মন্দ যে কোনো স্বভাবের পুরুষই জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন। সেটা অল্পও হতে পারে কিংবা একাধিক।

বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে এবং অবিবাহিত যৌবনে এ ধরণের সমস্যায় বেশি পড়তে হয়। এ সমস্যার শিকার কেউ হলে তার করণীয় কী? সে কিভাবে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে?

আসেলে এ ধরণের পরিস্থিতিতে কাঙ্খিত জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া সমস্যার আপাত সহজ সমাধান মনে হলেও বিভিন্ন বাস্তবতায় অধিকাংশ সময়ই এটা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। আবার অনেক সময় সম্পর্ক করা বাহ্যিকভাবে সম্ভব হলেও যে তরুণ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার দৃঢ় প্রত্যয় রাখে, সে ধর্মীয় কারণেই এ ধরণের সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে পারে না। তখন সে কী করবে?

তাজকিয়া বা আত্মশুদ্ধির দৃষ্টিতে উপরোক্ত অবস্থাগুলোকে বলা হয়- মানসিক সমস্যা। সে হিসেবে আত্মশুদ্ধির দৃষ্টিতে এটা একটা মানসিক রোগ। এ রোগের নাম এশকে মাজাজি। এশকে মাজাজির সরল বাংলা হিসেবে আমরা বলতে পারি- নিষিদ্ধ প্রেম, অনাকাঙ্খিত আকর্ষণ।  

আত্মশুদ্ধির জগতে অভিজ্ঞরা তাদের শাস্ত্রীয় গ্রন্থাবলীতে এ রোগ নিরাময়ের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে ও মেনে চললে খুব সহজেই এ রোগ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।

এশকে মাজাজিতে আক্রান্তদের এই মানসিক ব্যাধি থেকে আরোগ্য পেতে হলে সর্বাগ্রে করণীয় হলো- কাঙ্খিত জন থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকা। তার সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাব্য সব রাস্তা বন্ধ বা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।  

অনেকে এটাও বলেন, সম্ভব হলে তার সঙ্গে এমন বিরূপ আচরণ করা; যেন সে আপনার প্রতি চরম বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং ভবিষ্যতে আপনার প্রতি তার দুর্বল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকে।

দ্বিতীয় পরামর্শ হলো- প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভালোভাবে গোসল করে, উত্তম কাপড় পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়া। অত:পর নিজের জীবনের সব গোনাহের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং এ রোগ থেকে মুক্তিদানের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা।  

এরপর ৫শ’ থেকে ১ হাজার বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করা। প্রতিবার জিকিরের সময় মনে মনে এই কল্পনা করা যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ভালোবাসা আমার মন থেকে বের করে দিচ্ছি এবং একমাত্র আল্লাহর ভালোবাসা মনে স্থান দিচ্ছি।

তৃতীয় পরামর্শ হলো- নির্ভরযোগ্য বই অধ্যয়ন করা। যে বইয়ে কবর, হাশর ও জান্নাত-জাহান্নামের শাস্তি ও পুরস্কারের কথা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

চতুর্থ পরামর্শ হলো- প্রতিদিন নিয়মিত কিছু সময় নির্জনে বসে মনে মনে কল্পনা করা, আপনি এখন হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে আছেন। আল্লাহ আপনাকে প্রশ্ন করছেন, এই বান্দা! আমাকে ছেড়ে তুমি অন্যের পেছনে পাগল হয়েছিলে। অথচ আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছিলাম। অগণিত নেয়ামত দিয়েছিলাম। তোমার ভালোবাসা লাভের অধিকার ছিল আমার। কিন্তু না, আমার দেওয়া অঙ্গগুলোকে তুমি আমার অবাধ্যতার কাজে ব্যয় করেছ।

বস্তুত মনের সাহস হলো- সব কাজের মূল চালিকা শক্তি। তাই মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আর দেরি নয়। সাহস করে চেষ্টা শুরু করুন। মাত্র কয়েক দিনেই দেখবেন- আপনি মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আপনার চলাফেরা ঠিক হয়ে গেছে। কাজে মন বসছে, কোনো অস্বস্তিকর চাওয়া, অনাকাঙ্খিত যন্ত্রণা আপনাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে না।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।