ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্বে প্রতি মুহূর্তেই ধ্বনিত হচ্ছে পবিত্র আজান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
বিশ্বে প্রতি মুহূর্তেই ধ্বনিত হচ্ছে পবিত্র আজান আজানের মাধ্যমে আল্লাহর নামকে ধরণীর বুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়

মদিনায় হিজরতের পর মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়েতে থাকে। তখন প্রয়োজন হয় মুসলমানদের নামাজের সময় জানানো ও নামাজের প্রতি আহ্বান করার। 

এরই প্রেক্ষিতে আজানের সূচনা। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) স্বপ্নে আজানের শব্দগুলো শেখেন।

পরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে স্বপ্নের ঘটনা বর্ণনা করেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নের কথা শুনে বললেন, এটি অনেক উত্তম একটি স্বপ্ন। এ বাক্যগুলো তুমি হজরত বেলাল (রা.) কে শিখিয়ে দাও, যাতে নামাজের সময় হলে মানুষকে নামাজের প্রতি আহ্বান করতে পারে।

এরপর হজরত বেলাল (রা.) কে তা শিখিয়ে দেওয়া হলো। হজরত বেলাল (রা.)-এর কণ্ঠে যখন হজরত ওমর (রা.) আজানের বাক্যগুলো শুনতে পেলেন তখন তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী (সা.)! ওই আল্লাহর কসম, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমিও স্বপ্নে আজানের এ  বাক্যগুলো দেখেছি। এভাবেই সুমধুর আজানের রীতি চালু হয়। কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর সব মসজিদে সে আজান উচ্চারিত হতে থাকবে।

আজানের নিগূঢ় মাহাত্ম্য রয়েছে। আজানের মাধ্যমে আল্লাহর নামকে সারা ধরণীর বুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম আকাশ-বাতাসকে প্রকম্পিত করে তোলে। শুধু তাই নয়, জানিয়ে দেওয়া হয় নামাজের সময় হয়ে গেছে। আহ্বান করা হয় জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য, কল্যাণের পথে আসার জন্য। আজানের দরুণ শ্রোতার জন্য নামাজের স্থান খুঁজে বের করা সহজ হয়, আজানের প্রভাব বিশ্বব্যাপী।

অবাক করার মতো তথ্য হলো- বিশ্বে প্রতি মুহূর্তেই আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। এর হিসাবটা এমন- 

পৃথিবীর মানচিত্রে সবচেয়ে পূর্ব প্রান্তের মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। এ দেশের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম হলো- সাবিল, জাভা, সুমাত্রা ও বোর্নিও।

ফজরের সময় এই সাবিল শহর থেকে শুরু হয় হাজার হাজার ইন্দোনেশীয় মুয়াজ্জিনের আজান। ফজরের আজানের এই প্রক্রিয়া ক্রমেই এগিয়ে চলে পশ্চিমের দিকে।

সাবিলের আজান শেষ হওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর জাকার্তায় প্রতিধ্বনিত হয় আজানের সুর। এরপর সুমাত্রায় শুরু হয় আজানের এই পবিত্র প্রক্রিয়া। ইন্দোনেশিয়ার আজানের ধ্বনি শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ মালয়েশিয়ায়।

মালয়েশিয়া থেকে বার্মা। জাকার্তায় শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই আজানের সুর পৌছে যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশের পর আজানের জয়যাত্রা চলে পশ্চিম ভারতের দিকে, কলকাতা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত এবং তারপর এগিয়ে যায় বোম্বের দিকে।
ই মুহূর্তেও পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মানুষ শুনতে পাচ্ছে আজানের পবিত্র সুর
শ্রীনগর এবং শিয়ালকোট (পাকিস্তানের উত্তরের একটি শহর) শহর দু’টিতে আজানের সময় একইসঙ্গে শুরু হয়। শিয়ালকোট, কোয়েটা এবং করাচীর মধ্যে সময়ের পার্থক্য চল্লিশ মিনিটের মতো। তাই এ সময়ের মধ্যে সমগ্র পাকিস্তানজুড়ে শোনা যায় আজানের সুর। সেই সুর পাকিস্তানে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আফগানিস্তান আর মাস্কাটে এর ঢেউ এসে লাগে। বাগদাদের সঙ্গে মাস্কাটের সময়ের পার্থক্য এক ঘণ্টার।

আজানের আহ্বান প্রতিধ্বনিত হয় ‘হিজাজ-ই-মোকাদ্দাস’ (মক্কা ও মদিনার পবিত্র শহরসমূহ, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরাকের আকাশে-বাতাসে।  

বাগদাদ এবং মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ার সময়ের পার্থক্যও এক ঘণ্টা। তাই এ সময়ের মধ্যে সিরিয়া, মিসর, সোমালিয়া এবং সুদানে চলতে থাকে আজান।

পূর্ব ও পশ্চিম তুরস্কের মধ্যে ব্যবধান দেড় ঘণ্টার। এ সময়ের মাঝে সেখানে নামাজের আহ্বান শোনা যায়। আলেকজান্দ্রিয়া এবং ত্রিপলি (লিবিয়ার রাজধানী) এক ঘণ্টার ব্যবধানে অবস্থিত। একইভাবে আজানের প্রক্রিয়া সমগ্র আফ্রিকাজুড়ে চলতে থাকে। এর পর আটলান্টিক মহাসাগরের দেশ মরক্কো ও মৌরিতানিয়ায় এসে পৌঁছে।

পৃথিবীর পূর্ব উপকূলে তাওহিদ এবং রিসালাতের প্রচারের যে ধারা শুরু হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায় তা এসে আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে পৌঁছে সাড়ে নয় ঘণ্টা পর।

ফজরের আজানের বার্তা আটলান্টিকের উপকূলে পৌঁছাবার পূর্বে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে জোহরের আজানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং ঢাকায় এটা পৌঁছানোর পূর্বে শুরু হয়ে যায় আসরের আজান। দেড় ঘণ্টার মতো সময় পেরিয়ে এ প্রক্রিয়া যখন জাকার্তায় পৌঁছে ততক্ষণে সেখানে মাগরিবের সময় হয়ে আসে এবং মাগরিবের সময় সুমাত্রায় শেষ না হতেই সাবিলে এশার আজানের আহ্বান ভেসে আসে।

একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আমাদের চোখে পড়বে আজানের অবাক করা দিকটি আর তা হলো- পৃথিবীর বুকে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও হাজার হাজার মুয়াজ্জিনের গলায় উচ্চ স্বরে আজানের সুর ভেসে বেড়ায়।

এমনকি আমরা যে মুহূর্তে লেখাটি পড়ছি- নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই মুহূর্তেও পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মানুষ শুনতে পাচ্ছে আজানের পবিত্র সুর। যে সুরে মুয়াজ্জিন দরাজ গলায় আহ্বান করছেন- আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার! (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান)। হাইয়া আলাস সালাহ! (এসো নামাজের জন্য)। হাই আলাল ফালাহ! (এসো কল্যাণের পথে)।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।