এসব দিয়ে আল্লাহতায়ালা মানুষকে সতর্ক করেন বলে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঘাবড়ে না যেয়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কিছু আমলের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচা যায় বলে হাদিসে বলা হয়েছে। ওই সব হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস কিংবা বন্যা হয়- তখন সবার উচিত আল্লাহর কাছে তওবা করা। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে আল্লাহর জিকির করো, তার নিকট তওবা করো। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আর আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে- নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-দরুদ পাঠ করা। হাদিসে বর্ণিত আছে, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। -মিশকাত শরিফ
অন্যদিকে ঝড়-তুফানের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা ও আজান দেওয়া সুন্নত। তবে এই আজানে ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার প্রয়োজন নেই।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, বৃষ্টি হলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিয়া। ’ অর্থ: হে আল্লাহ! এই বৃষ্টি যেন আমাদের জন্য উপকারী ও কল্যাণকর হয়। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
সাহাবিদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন, ধৈর্যধারণ করতেন। আমরা যদি নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের মতো মসজিদমুখি হই, গোনাহ পরিত্যাগ করি- তবে প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব- ইনশাআল্লাহ।
শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো সম্ভব নয়। এ কথা অনস্বীকার্য, আজকের বাংলাদেশে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসছে তা আমাদের কৃতকর্মেরই ফসল।
মানুষের পাপাচার প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের অন্যতম কারণ। এতে গবাদিপশুসহ অন্যান্য সৃষ্টজীব সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উত্তরণ ও নিষ্কৃতির জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা, সত্যের পথে অনুগমন ও পাপ বর্জন করার বিকল্প নেই।
নবী করিম (সা.) এর যুগে একবার ভূমিকম্প দেখা দিল। তিনি সাহাবিদের সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের প্রভু তোমাদের থেকে তওবা চাইছেন। তোমরা সবাই তওবা করো।
হজরত আয়েশা (রা.) কে ভূমিকম্প সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- ব্যভিচার, মদপান, গান-বাজনা প্রভৃতি যখন মানুষের মজ্জাগত হয়ে যায় তখন আল্লাহতায়ালা ক্রোধান্বিত হন। মানুষ সাধারণ সতর্কবাণীর দ্বারাই যদি তওবা করে নেয় তো ভালো, অন্যথায় বড় বড় বিল্ডিং ও আলিশান ভবনগুলোও মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেন।
সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের গোনাহ বর্জন করতে হবে। দেহ-মন সুস্থ রেখে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় অপরাধের মূলোৎপাটন করতে হবে। সুদ-ঘুষে অনীহা ও দারিদ্র্যবিমোচনে সিদ্ধহস্ত হতে হবে। অন্যের প্রাপ্য পরিশোধে দ্বিধা নয়, অগ্রগামী হতে হবে। বস্তুর ওপর নির্ভরতা এড়িয়ে আমাদের আল্লাহমুখি হতে হবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এমএইউ/