এই বার্তার পর রমজানের সূচি দেওয়া। এমন বার্তার বিষয়ে জানলাম সহকর্মীর কাছ থেকেও।
অনুসন্ধানে যা পেলাম তার সারমর্ম হলো- সবার আগে রমজান মাসের খবর দিলে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হবে-এ ব্যাপারে কোনো দলিল বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এ বার্তার কোনো ভিত্তি নেই। বরং এমন বার্তার আদান-প্রদান নিষিদ্ধ। কেননা, এমন বার্তা প্রচারের মাধ্যমে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর মিথ্যারোপ করা হচ্ছে।
অভিজ্ঞ ও অনুসন্ধানী ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- যারা বিষয়টি হাদিস বলে মানুষের মাঝে প্রচার করছে, তা হাদিস নয়। এটা হাদিসের নামে বানানো কথা, যার কোনো ভিত্তি নেই।
সাধারণ নিয়মমতে রমজান মাস নির্ধারিত হবে দেশের নিযুক্ত চাঁদ দেখা কমিটির মাধ্যমে। আর এটা নির্ধারণ হবে শাবান মাসের শেষের দিকে। সুতরাং কোনো ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয় যে, সে শাবান মাসেই রমজান মাসকে দৃঢ়তার সঙ্গে নির্ধারণ করবে।
তাই ইসলামি স্কলারদের পরামর্শ হলো, এ ধরনের মিথ্যা-বানোয়াট জাল ম্যাসেজ অন্যের কাছে প্রেরণের পূর্বে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা, সত্যতা যাচাই করা।
তবে রমজান মাসের আগমন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো দোষণীয় কোনো বিষয় নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের রমজানের আগমন উপলক্ষে সুসংবাদ দিতেন এবং তাদের উত্তম আমলসমূহের জন্য প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করতেন।
এ বিষয়ে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাবান মাসের শেষ দিনে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন।
ওই ভাষণে তিনি বলেন, হে লোক সকল! একটি মহিমান্বিত মাস তোমাদেরকে ছায়া হয়ে ঘিরে ধরেছে। এ মাস একটি বরকাতময় মাস। এটি এমন এক মাস, যার একটি রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহতায়ালা এ মাসের সিয়ামকে ফরজ করেছেন আর নফল করে দিয়েছেন এ মাসে রাতের কিয়ামকে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ সম্পাদন করল। এ মাস সবরের (ধৈর্যের) মাস; সবরের সওয়াব জান্নাত। এ মাস সহমর্মিতার। এ এমন এক মাস যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, এ ইফতার তার গোনাহ মাফের কারণ হবে, হবে জাহান্নামের অগ্নিমুক্তির উপায়। তার সওয়াব হবে রোজাদারের অনুরূপ। অথচ তার (রোজাদার) সওয়াব একটুও কমানো হবে না।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের সবাইতো রোজাদারের ইফতারির আয়োজন করতে সমর্থ নই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ সওয়াব আল্লাহতাআলা ওই ইফতার পরিবেশনকারীকেও প্রদান করবেন, যে একজন রোজাদারকে এক চুমুক দুধ, একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে পেট ভরে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করল, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউজে কাওসার থেকে এভাবে পানি খাইয়ে পরিতৃপ্ত করবেন- যার পর সে জান্নাতে (প্রবেশ করার পূর্বে) আর পিপাসার্ত হবে না। এমনকি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা এমন এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত। মধ্য অংশে মাগফিরাত আর শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত। যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধীনস্তদের ভার-বোঝা সহজ করে দেবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন। -মিশকাতুল মাসাবিহ, কিতাবুস সাওম, হাদিস নং: ১৯৬৫
হাদিসে রমজান মাস সম্পর্কে এভাবেই বলা হয়েছে। এর বাইরে অন্য কিছু বলা হয়নি। সুতরাং রমজান মাসের আগমনের খবর সবার আগে অন্যকে জানালে জাহান্নাম হারাম হবে- এ কথা ঠিক নয়। আর রমজান মাসের আগমনের খবর অন্যকে জানানো যাবে- যাতে তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
এমএইউ/