ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

ইসলাম

‘পৃথিবীর চাকচিক্যময় শোভায় প্রতারিত হওয়া উচিত নয়’

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
‘পৃথিবীর চাকচিক্যময় শোভায় প্রতারিত হওয়া উচিত নয়’ পৃথিবীর চাকচিক্যময় শোভায় প্রতারিত হওয়া উচিত নয়। ইহকালীন জগতের সবকিছুই হচ্ছে পরীক্ষার মাধ্যম এবং এর সবই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে

সূরা কাহাফ কোরআনে কারিমের একটি প্রসিদ্ধ সূরা। এ সূরায় রয়েছে ১১০টি আয়াত ও ১২টি রুকু। এ সূরায় বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কাহাফ বা গুহাবাসীদের ঘটনা। এ ঘটনায় রয়েছে মুমিনদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু।

এ সূরায় বর্ণিত শিক্ষণীয় কয়েকটি বিষয়গুলো হলো- কোরআন ঐশী গ্রন্থ, আল্লাহতায়ালার কোনো সন্তান নেই, প্রত্যেক কাজে ইনশাআল্লাহ তথা ‘আল্লাহ যদি চান’ বলাটা জরুরি। এ ছাড়া সূরা কাহাফের বিভিন্ন স্থানে মুমিনদের ধৈর্যধারণের উপদেশ এবং জান্নাত ও জাহান্নামের প্রকৃতির কথা বলা হয়েছে।

দেওয়া হয়েছে মুমিন ও কাফেরের তুলনা, পার্থিব জীবনের উপমা ইত্যাদি।  

এ সূরায় আরও বর্ণিত হয়েছে, হজরত আদম (আ.) ও ইবলিসের ঘটনা, যুলকারনাইনের ঘটনা, হজরত মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা এবং কিয়ামতের বিবরণ। মুফাসসিরদের মতে, সূরা কাহাফে বর্ণিত এসব ঘটনা বিস্ময়কর। এগুলো একত্ববাদ ও ঈমানের চেতনাকে জোরদার করে।  

সূরা কাহাফের সাত নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সেগুলোকে আমরা তার (ভূমির) জন্য শোভা করেছি যাতে তাদের পরীক্ষা করি যে, কর্মের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?’

বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, পৃথিবীর চাকচিক্যময় শোভায় প্রতারিত হওয়া উচিত নয়। ইহকালীন জগতের সবকিছুই হচ্ছে পরীক্ষার মাধ্যম এবং এর সবই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের উচিত ইহকালের মোহ থেকে নিজের মুক্ত রাখা এবং পরকালের অনন্ত অসীম জীবনের কথা মনে রেখে সৎ কাজ করা।

সূরা অবতীর্ণের পটভূমি হলো- কোরাইশ নেতারা তাদের দুই সহযোগীকে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আহ্বান সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করতে মদিনার দুই ইহুদি পন্ডিতের কাছে পাঠায়। অতীতের আসমানি গ্রন্থগুলোতে মুহাম্মদ (সা.)-এর আহ্বান ও দাওয়াত সম্পর্কে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় কিনা তা জানা ছিল তাদের উদ্দেশ্য।  

তখন ইহুদি পণ্ডিতরা বললেন, তোমরা মুহাম্মদের কাছে তিনটি প্রশ্ন করো। যদি এই তিনটি প্রশ্নের যথাযোগ্য জবাব তিনি দিতে পারেন তাহলে বুঝবে যে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত নবী। আর যদি এই তিন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন তাহলে বুঝবে যে এই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী ও তোমরা তার ব্যাপারে তখন যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।  

প্রথমে তার কাছে প্রশ্ন করবে, সুদূর অতীতের সেই গুহাবাসী যুবকদের বিস্ময়কর কাহিনী সম্পর্কে। যারা তাদের জাতি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। এরপর প্রশ্ন করবে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যে পুরো পৃথিবীর চার দিকে ঘুরেছিলো এবং তার রাজ্য পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে বিস্তৃত ছিলো। তৃতীয়ত তাকে রুহের বাস্তবতা বা স্বরূপ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে।  
এ প্রসঙ্গে সূরা কাহাফের ৯ নম্বর আয়াত থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে....
এরপর কোরাইশদের ওই দুই প্রতিনিধি মহানবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে ওই প্রশ্নগুলো তোলে। জবাবে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সূরা কাহাফ নাজিল হয়। তাতে ওইসব প্রশ্নের উত্তর ছিলো।  

সূরা কাহাফে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে বলা হয়েছে। যা মুসলমানদের কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থার মধ্যেও লালন করা জরুরি। সেটা হলো- দুর্নীতিতে অভ্যস্ত, অন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দৃশ্যত শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিপক্ষের কাছেও সত্যের অনুসারী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কখনও আত্মসমর্পণ করা কিংবা নতজানু হওয়া  উচিত নয়। উচিত নয় দুর্নীতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া। বরং আসহাবে কাহাফের বীর যুবকদের মতো রুখে দাঁড়াতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং শক্তি না থাকলে হিজরত করতে হবে।  

প্রশ্ন হলো- আসহাবে কাহাফ কারা ছিলেন? 

এ প্রসঙ্গে সূরা কাহাফের ৯ নম্বর আয়াত থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি মনে করেছো যে, কাহাফ ও রাকিম (গুহা ও ফলক)-এর অধিবাসীরা আমাদের বিস্ময়কর নিদর্শনগুলোর অংশ ছিলো? যখন কয়েকজন যুবক গুহাতে আশ্রয় নিলো- তখন তারা বললো, হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ হতে আমাদের অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের কর্মে সঠিক পথের ব্যবস্থা করো। এরপর আমরা গুহাতে তাদের কানের ওপর কয়েক বছরের জন্য ঘুমের আবরণ আরোপ করলাম। এরপর আমরা তাদের পুনরুত্থিত করলাম এটা জানানোর জন্য যে, দু’দলের মধ্যে কোনটি তাদের গুহাবাসের কাল সঠিকভাবে গণনা করেছে। আমরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তান্ত তোমার কাছে যথাযথভাবে বিবৃত করছি; নিশ্চয় তারা কয়েকজন যুবক ছিলো- যারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলো এবং আমরা তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের অন্তঃকরণ দৃঢ় করেছিলাম সেসময় যখন তারা এ কথা বলে উত্থান করেছিলো যে, আমাদের প্রতিপালক আকাশমণ্ডল ও জমিনের প্রতিপালক, আমরা তাকে ছাড়া অন্যকোনো উপাস্যকে আহ্বান করবো না, অন্যথায় নিঃসন্দেহে আমরা অসঙ্গত কথা বলেছি। ’

‘এরা আমাদের সম্প্রদায় যারা তাকে ছেড়ে অন্যদের উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে; তারা কেন তাদের উপাস্যদের সত্যতার সপক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না? তার চেয়ে বেশি জালেম কে হবে যে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে? (যুবকরা একে অপরকে বলল) যখন তোমরা তাদের থেকে এবং আল্লাহ ছাড়া তারা যাদের আহ্বান করে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তখন গুহাতে আশ্রয় গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তার অনুগ্রহ থেকে প্রসারতা দান করবেন এবং তোমাদের কর্মে তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের উপকরণ সরবরাহ করবেন। তুমি লক্ষ্য করবে যে, যখন সূর্য উদয় হয় তখন তাদের গুহা থেকে ডান দিকে ঢলে অতিক্রম করে যায় এবং যখন সূর্যাস্ত হয় তখন তা তাদের বাম দিক দিয়ে অতিক্রান্ত হয়; এবং তারা তার ভেতরে তথা গুহায় এক প্রশস্ত স্থানে অবস্থান করছে। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন। আল্লাহ যাকে পথনির্দেশ দান করেন সে পথপ্রাপ্ত এবং যাকে পথভ্রষ্টতায় ছেড়ে রাখেন তার জন্য তুমি কোনো অভিভাবক ও পথনির্দেশক পাবে না। ’

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।