পবিত্র কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ বুঝার জন্য।
বাকী এগারো মাসের তুলনায় এ ব্যস্ততা শুধু কোরআনকে ঘিরে। রমজানের বিশেষ ইবাদত খতমে তারাবি, কিয়ামুল লাইল ইত্যাদি নিয়ে হাফেজদের প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রতিদিনের নামাজে রুটিনমাফিক কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়। রমজানে হাফেজদের প্রস্তুতির নানাদিক নিয়ে আজকের আলোচনা।
হাফেজদের নিয়োগ ও পূর্বপ্রস্তুতি
রমজানে তারাবির জন্য এক থেকে দেড় মাস আগেই হাফেজদের পুর্ব প্রস্তুতি শুরু হয়। যাদের মসজিদ নির্ধারিত হয়নি, তারা মসজিদ ঠিক করার জন্য যোগাযোগ শুরু করেন। যাদের আগে থেকেই মসজিদ ঠিক থাকে তারাও নেন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। তারাবির জন্য হাফেজ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় শাবান মাস থেকেই। তবে অধিকাংশ মসজিদ কর্তৃপক্ষ শবে বরাতের হাফেজ নির্বাচন চূড়ান্ত করেন। কোনো কোনো মসজিদে হাফেজ নিয়োগ দেওয়া হয়, রমজানের এক সপ্তাহ আগে। সে হিসেবে যে সব হাফেজদের তারাবির জন্য এখনও মসজিদ ঠিক হয়নি তারা বিভিন্ন মসজিদে ইন্টারভিউ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
চূড়ান্ত নিয়োগ পরবর্তী প্রস্তুতি
আগেই বলেছি, রমজান মাসে হাফেজরা খুব ব্যস্ত সময় কাটান। কিন্তু তারা এ ব্যস্ততাকে আল্লাহর নেয়ামত বলেই মনে করেন। শাবান মাসের ২৯ তারিখ থেকেই হাফেজরা মসজিদে চলে যান। অপেক্ষায় থাকেন নুতন চাঁদের। পবিত্র রমজানের দেখা গেলে শুরু হয় খতমে তারাবি।
রমজানের প্রথম তারাবি থেকেই শুরু হয় হাফেজদের ধারাবাহিক কোরআন তেলাওয়াত। প্রতিদিন নির্ধারিত অংশ ভাগ করে নামাজে তেলাওয়াত করতে হয়। এর আগে নিজেরা তেলাওয়াত করে তা ঝালাই করে নেন। তেলাওয়াতের জন্য হাফেজরা তাদের মতো করে সময় বেছে নেন। তবে বেশিরভাগ হাফেজ সেহরির আগে, সকালে ও জোহরের নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। অনেকেই ইফতারের পরেও এ প্রস্তুতি শেষ করেন। অনেকের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটে।
আসলে রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই হাফেজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই হাফেজরা সামান্য সময়ও অহেতুক ব্যয় করেন না বা করতে পারেন না। খতমে তারাবির ইমামতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হয়।
একজন হাফেজ শুধু তারাবির নামাজেরই দায়িত্ব পালন করেন না। তাকে আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। মসজিদের নির্ধারিত ইমামের অনুপস্থিতিতে কখনও কখনও ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়াতে হয়। অনেকে মসজিদে ইতেকাফও করেন। এসব দায়িত্ব পালন করার করাণে হাফেজ সাহেবরা সাধারণত পরিবারের সঙ্গে ইফতার ও সেহরি করার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন।
শেষ কথা
ইমাম আবু বকর বালখি (রহ.) বলেন, ‘রজব মাস হলো- বীজবপন, শাবান মাস হলো- সেচ দেওয়া ও রমজান মাস হলো- ফসল কাটার মাস। ’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বছরের নির্দিষ্ট কিছুদিন তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার রয়েছে। তাই সেই উপহার গ্রহণে তোমরা সচেষ্ট হও। ’
হাফেজ সাহেবরা সেই উপহার গ্রহণে আমাদের সহযোগিতা করেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
আল্লাহতায়ালা হাফেজদের রমজান মাসের পবিত্রতা এবং পবিত্র কোরআনের মর্যাদা রক্ষা তারাবির নামাজ পরিচালনার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
[email protected]
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
এমএইউ/