মালির ডিজেনি শহরে ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছিল বড় মসজিদ নামে পরিচিত মাটির মসজিদটি। মালির সুলতান কনবরু ইসলাম গ্রহণ করার পর তার রাজপ্রাসাদ ভেঙে ফেলে সেখানে এ মসজিদটি তৈরি করান।
মসজিদের পুব দিকে নিজের বসবাসের জন্য অন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করান। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী এ মসজিদের দু’টি মিনার নির্মাণ করান এবং পরবর্তীতে মসজিদটির চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
১৮২৮ সালে ফরাসি পর্যটক রেনে এ এলাকা সফর করেন। তার সফরের আগ পর্যন্ত এ মসজিদটি সম্পর্কে লিখিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রেনে তার সফর শেষে লেখেন, ‘ডিজেনি শহরে মাটির তৈরি একটি মসজিদ আছে। এর দুই পাশে দু’টি দর্শনীয় মিনার আছে। ’
এর পর থেকে মাটির তৈরি এ মসজিদ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বানি নদীর তীরে অবস্থিত মসজিদটি ২৪৫-২৪৫ ফুট আয়তনবিশিষ্ট ৩ ফুট উঁচু প্লাটফরমের ওপর তৈরি। বর্ষাকালে বানি নদীর প্লাবিত পানি থেকে মসজিদটিকে সুরক্ষা করে এ প্লাটফরম।
মসজিদের দেয়ালগুলো তাল গাছের কাঠ, যা স্থানীয়ভাবে ‘টরল’ নামে পরিচিত- সেগুলো দ্বারা নকশা করা। শুধু নকশা নয়, তাল গাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধসে না যায়।
মধ্যযুগে আফ্রিকার এ অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র ছিল এ মসজিদটি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তখন কোরআন শিক্ষার জন্য এ মসজিদে আসত।
২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি মসজিদের ছাদের একটি অংশ এবং ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর এর দক্ষিণ দিকের মিনারের একটি অংশ ধসে পড়লে ‘দি আগা খান ট্রাস্ট কালচার’ নিজস্ব খরচে এর সংস্কার করে দেয়। ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
অসাধারণ গঠনশৈলীর কারণে মসজিদটি শুধু সাধারণ দর্শনার্থীদেরই নয়, স্থাপত্যশিল্পীদেরও নজর কাড়ে। মসজিদটির ওপরিভাগের মাটির ছাদ রক্ষার কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। এতে এমনভাবে মাটির প্রলেপ দেওয়া আছে যে, প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতেও ওই ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না।
১৯৩০ সালে ফ্রান্সে তৈরি করা হয় এই মসজিদেরই একটি বিশেষ রেপ্লিকা।
মসজিদটি জেনির মুসলমানদের কেবল উপাসনালয়ই নয়, যাবতীয় ধর্মীয় উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুও এটি।
কারণ, দেশটির অধিবাসীরা মসজিদটিকে তাদের গর্ব এবং সত্যিকার অর্থে আফ্রিকার গর্ব বলে মনে করেন। তাছাড়া মসজিদটিকে জেনি এবং মালির জাতীয় প্রতীক হিসেবেও গণ্য করেন অনেকেই। কারণ, জেনি কিংবা মালির কথা বললেই চলে আসে বিখ্যাত এই মসজিদটির কথা।
স্থানীয় জনসাধারণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটা সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মসজিদটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রমজানের বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে কাদার প্রলেপ দিয়ে মসজিদটি সংস্কার করেছে স্থানীয় নানা বয়সী মুসলমানরা।
প্রতি রমজানের আগে বানি (শশও বলা হয়) নদীর তীর থেকে কাদা সংগ্রহ করে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে মসজিদের সকল স্থানে মাটির প্রলেপ দেয়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
এমএইউ/