রোববার (১৮ জুন) রাতে মসজিদের সামনে মুসল্লিদের ওপর হামলাকারী সন্দেহে আহত এক ব্যক্তিকে জনসাধারণের ক্ষোভ থেকে প্রাণে বাঁচান ইমাম মাহমুদ। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগে পর্যন্ত তার কোনো ক্ষতি এমনকি তার গায়ে একটি আঁচও লাগতে দেননি তিনি।
জানা যায়, ওই রাতে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে হামলার পরপরই হামলাকারীকে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন উপস্থিত জনতা। এ সময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে হামলাকারীকে প্রাণে বাঁচানোর কারণে ব্রিটিশ গণমাধ্যমজুড়ে ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদের গুণকীর্তন চলছে। যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গত রোববার গভীর রাতে সেভেন সিস্টারস রোডের ফিন্সবারি পার্ক মসজিদে তারাবি নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুসল্লিদের ওপর অতর্কিত গাড়ি ওঠিয়ে দেন ৪৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত হামলাকারী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাংলাদেশি এক অভিবাসী। আহত হন আরও অন্তত ১০জন। সেই সময় মসজিদের মুসল্লিরা রাস্তা ধরে বাসার দিকে ফিরতে থাকায় হামলাকারী পালিয়ে যেতে পারেননি।
হামলাকারী ভ্যানচালক হামলার পর চিৎকার করে বলছিল, আমি সব মুসলমানকে মেরে ফেলতে চাই, ঠিক তখনও তাকে পাল্টা আঘত না করে মানুষজনকে বার বার শান্ত থাকতে বলেন ইমাম মাহমুদ।
ভ্যানচালক এ সময় নিজের কৃতকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চারপাশের মানুষজনকে বলে থাকে, আমাকে মারো, আমাকে মারো। তারপরও লোকজনকে শান্ত থাকতে বলে বার বার তাকে পুলিশে সোপর্দ করার অনুরোধ জানাতে থাকেন মাহমুদ।
লন্ডন পুলিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জনগণের এই সংযমের প্রসংশা করেছে। ওদিকে, জনগণকে শান্ত রাখার চেষ্টার জন্য মাহমুদকে হিরো অব দ্য ডে খেতাব দিয়েছে মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউজ।
হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইমাম মাহমুদ। তিনি দেখেন, হামলাকারী মাটিতে পড়ে আছেন। উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে রেখেছে।
মাহমুদ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় আমরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলি। এ সময় অনেকে তাকে পিটিয়ে হত্যার কথা বলেন। কিন্তু এতে আমি বাধা দেই। এমনকি হামলাকারীর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করি। ’
সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইমাম মাহমুদ। তিনি জানান, ‘চারদিক থেকে হামলাকারীর ওপর আঘাত আসতে থাকে। তার ওপর সব ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। পুলিশ ভ্যান না আসা পর্যন্ত আমি এবং অন্যরা মিলে হামলাকারীকে সুরক্ষা দেই।
আমরা পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছি। তাদেরকে বলেছি, উত্তেজিত জনতা হামলাকারীকে আঘাতের চেষ্টা করছে। আপনারা যদি কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে হয়তো তার (হামলাকারীর) মারাত্মক ক্ষতি হবে। আমরা উত্তেজিত লোকজনকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়েছি, যাতে পুলিশি জিম্মায় না নেওয়া পর্যন্ত হামলাকারীকে আঘাত করতে না পারে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। এসব শুধুমাত্র আমি একাই করিনি, সেখানে আমাদের একদল ভাই ছিল। ’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কথা শুনে হন এবং লোকজনকে শান্ত করেন। শেষ পর্যন্ত খুনের দায়ে আটক হামলাকারীর গায়ে কোনো আচড় লাগেনি। ’
ফিন্সবারি পার্কের বাসিন্দাদেরও প্রশংসা করেন ইমাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মসজিদটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ...আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি, আমরা যেকোনো ধরনের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারি। ’
স্থানীয় এক ক্যাফের মালিক জানান, ‘শুধুমাত্র ইমামের কারণেই এখন পর্যন্ত ওই হামলাকারী বেঁচে আছেন। ইমাম যদি সেখানে উপস্থিত না হতেন, হামলাকারী আজ বেঁচে থাকতো না। ’
ঘটনার রাতে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার সময় হামলাকারী চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করবো। ’
-দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এমএইউ/