জঙ্গি হামলার সময় কী করছিলেন তিনি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
শোলাকিয়ায় সাধারণত ঈদের জামাত পড়ান মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
হাফেজ মওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ শোলাকিয়া মাঠে ঈদের দিনের ঘটনার বর্ণনাকালে জানান, শোলাকিয়া মাঠের নিয়োগপ্রাপ্ত দ্বিতীয় (বিকল্প) ইমাম আমি। শোলাকিয়ার মূল ইমাম মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের অনুপস্থিতে গত বছর ১৮৯তম ঈদ জামাতের ইমামতি করি। বস্তুত আমি, কিশোরগঞ্জের বড়বাজার এলাকার শাহাবুদ্দীন মসজিদের ইমাম এবং স্থানীয় জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঘটনার তাৎপর্য বুঝতে পেরে ও অন্যদের পরামর্শ অনুসারে নামাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়। এরপর খুতবা ও দোয়াও একইভাবে সংক্ষিপ্ত করে শেষ করা হয়। কেননা, এ ঘটনার কোনো আঁচ যদি মাঠের কোনো অংশে পড়ত, তবে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
শোয়াইব আবদুর রউফ বলেন, পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা। সুতরাং, ধর্মের নাম নিয়ে কেউ এই ধরনের হত্যাকাণ্ড চালালে তা কোনোভাবেই ধর্মসিদ্ধ নয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, ‘সকাল নয়টা থেকে নয়টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত আমার বয়ান (বক্তৃতা) করার কথা। বয়ান শুরু করলাম আরও ১০ মিনিট আগে। কিন্তু নয়টা ৪৬ বেজে গেল, হুজুর (মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ) আসেননি, আমাকেও কেউ বয়ান থামাতে বলছে না। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমাকে ইশারা দেওয়া হলো, বয়ান চালিয়ে যান। এ সময় প্রথম সন্দেহ হয়, কোথাও কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। ’
শোয়াইব আবদুর রউফ এভাবেই ১০টা পর্যন্ত বয়ান চালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি দেখছিলাম মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো তারা নামাজের জন্য প্রস্তুত। এমন অবস্থায় আমি বক্তৃতা শেষ করে পেছনের দিকটায় গেলাম। সেখানে ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেবের সঙ্গে অন্যদের কথোপকথন থেকে বুঝলাম ঝামেলা হয়েছে। তখন সিদ্ধান্ত হলো যে যথাসময়েই নামাজ হবে। ’
যখন শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ বয়ান করছিলেন, তখন শোলাকিয়া মাঠের আধা কিলোমিটারের মধ্যে আজিমউদ্দীন হাইস্কুলের কাছে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলি চলছিল। মাঠে অনেকেই বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন। অনেকে পরিবার-পরিজনের ফোনে বিষয়টি জানতে পারেন। কিন্তু আবদুর রউফ ছিলেন অন্ধকারে। নামাজ শুরু হওয়ার মিনিট ১৫ আগে কোনো একটা সমস্যার আঁচ পান তিনি।
ঈদের দিন জঙ্গিদের ওই হামলায় নিহত হন পুলিশের দুজন সদস্য। পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে আবির রহমান নামের এক জঙ্গি ও নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামের এক নারী নিহত হন।
শোলাকিয়া মাঠের কাছে বিস্ফোরণের পর ইমাম মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ মাঠে উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার থেকে নামেন। সেখান থেকে মাঠে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তাকে সার্কিট হাউসে যেতে হয়। এর মধ্যে ঈদের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় বিকল্প ইমাম শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ
নামাজ পড়ান।
এ বছর শোলাকিয়ার ১৯০তম ঈদ জামাতের প্রাক্কালে নিরাপত্তার প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে মানুষের কাছে। দেশের বৃহত্তম ঈদগাহের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে শান্তি ও নিরাপত্তার দিকে প্রশাসনকে মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
জেডএম/