তবে রমজানের সিয়াম পালনেই কেবল দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। রমজান পরবর্তী জীবনেও রয়েছে বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য।
রমজান ও মানুষ
রমজানের আগমন ও প্রস্থানে মানুষের সঙ্গে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কোনো পরিবারে যখন কেউ আগমন করে, তখন তার পরিবার খুশি হয়। তেমনিভাবে রমজানের আগমনে মুমিনরা আনন্দিত হন। আবার যখন কোনো মানুষ দুনিয়া থেকে চলে যায়, তখন তার জন্য জীবিতরা কাঁদতে থাকে। তেমনিভাবে রমজানের প্রস্থানে মুমিনরা কাঁদতে থাকে।
নিজের আমল নিজে নষ্ট করা চলবে না
রমজান মাসে মুমিন-মুসলমানরা সিয়াম পালনের পাশাপাশি তারাবি আদায়, জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন সৎ আমলে ব্যস্ত থাকেন। গোনাহের কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু রমজান মাস চলে গেলে অনেকেই এসব আমল থেকে দূরে সরে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা কখনও সেই নারীর মতো হয়ো না, যে অনেক পরিশ্রম করে নিজের জন্য কিছু সুতা কাটল, কিন্তু পরে তা নিজেই টুকরো টুকরো ছিঁড়ে ফেলল...। ’ -সূরা আন নাহল: ৯২
বালাম বাউরার মতো না হওয়া
বালাম বিন বাউরার নাম অনেকেই জানি। তিনি বনি ইসরাঈলের একজন বিখ্যাত বুজুর্গ। সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছিল, কিন্তু পরে আবার আগের পথে ফিরে যায়। সে হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা ও মাগফিরাতের বদলায় আজাব ক্রয় করে। তার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘(হে মুহাম্মদ!) তুমি তাদের কাছে (এমন) একটি মানুষের কাহিনী (পড়ে) শোনাও, যার কাছে আমি (নবীর মাধ্যমে) আমার আয়াতসমূহ নাজিল করেছিলাম, সে তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, অতপর শয়তান তার পিছু নেয় এবং সে সম্পূর্ণ গোমরা লোকদের দলভূক্ত হয়ে পড়ে। ’ -সূরা আল আরাফ: ১৭৫
শয়তানকে ভয় করা
রমজান মাসের পর শয়তানকে আবার পুর্বের ন্যায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল- যেমনটি আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। যে আল্লাহকে আঁকড়ে ধরবে আল্লাহ তাকে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন। শয়তানের লক্ষ্য হলো মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো, গোনাহের কাজে জড়ানো। এসব মানুষের দোজখে প্রবেশের হাতিয়ার। তাই শয়তান সর্বদা চায়, মুমিনদের রমজানের আমলগুলো কীভাবে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু শয়তানের এসন ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো; সে তার দলবলদের এ জন্যেই আহ্বান করে যেন তারা (তার আনুগত্য করে) জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে। ’ -সূরা ফাতির: ৬
নামাজ ত্যাগ না করা
রমজান মাসে প্রায় মুসলমানই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। রমজানের পরও এই উত্তম অভ্যাসটি ধরে রাখতে হবে। কেননা নামাজ হচ্ছে জীবন ও মরণে আলো। নামাজ পরিবার ও সম্পত্তিতে বরকত হিসেবে কাজ করে। যার নামাজ ঠিক, তার সব আমল ঠিক। নামাজ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজসমূহের ওপর (গভীরভাবে) যত্নবান হও, (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী নামাজ এবং তোমরা আল্লাহর জন্যে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে যাও। ’ –সূরা বাকারা: ২৩৮
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন বান্দার সব কাজের মধ্যে প্রথমে তার নামাজের ব্যাপারে হিসাব নেওয়া হবে। যদি তা ঠিক থাকে তাহলে সে সফলকাম ও কামিয়াব হবে। আর যদি ঠিক না থাকে তাহলে সে ব্যর্থ ও ধ্বংস হবে। ’ –আহমদ
কোরআন তেলাওয়াত পরিত্যাগ না করা
যারা শুধু রমজানে কোরআন তেলাওয়াত করে আর বাকী বছর তা পরিত্যাগ করে- তাদের দলভূক্ত হওয়া চলবে না। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। প্রত্যেকের উচিত হলো- দিনের কোনো একটি সময় নির্দিষ্ট করা, যে সময়ে কম করে হলেও ১ পৃষ্ঠা কোরআন তেলাওয়াত করা যায়। সম্ভব হলে অর্থ ও তাফসির পাঠ করা। এক কথায় ওই তাদের দলভূক্ত হওয়া যাবে না, যাদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা তার নবীর ভাষায় বলেছেন, ‘সেদিন রাসূল বলবে, হে মালিক! অবশ্যই আমার জাতি এই কোরআনকে (একটি) পরিত্যাজ্য (বিষয়) হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ’ -সূরা আল ফুরক্বান: ৩০
অধিক জিকির করা
রমজানের পরও অধিক হারে জিকির করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যায় রাসূলের (সা.) শিক্ষা দেওয়া দোয়া-দরুদ পাঠ করতে হবে। বিভিন্ন কাজের শুরুতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা দেওয়া দোয়াগুলো পাঠ করে কাজ শুরু করতে হবে। সফলভাবে কোনো কাজ শেষ হলে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে।
সৎ সঙ্গ গ্রহণ করা
প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য হলো- এমন বন্ধু গ্রহণ করা, যে সৎ কাজে এবং আল্লাহর আনুগত্যের পথে সাহায্য করবে। সুতরাং মুমিনের উচিৎ এমন সাথী গ্রহণ করা, যে অন্যায় পথ থেকে, পাপের রাস্তা থেকে সতর্ক করে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করবে।
শাওয়াল মাসের রোজা পালন করা
রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসের রোজা পালনের ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু আইয়ূব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে সিয়াম পালন করল তারপর শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা পালন করল তাহলে সে পুরো বছর রোজা পালন করল। ’ –সহিহ মুসলিম
পুরো বছর রোজার হিসাব হলো- রমজানের রোজা দশ মাসের জন্য। কেননা, প্রতিটি ভালো কাজ দশ গুণ। আর ৬ দিনের রোজা ৬০ দিন সমান অর্থাৎ ২ মাস। সুতরাং পূর্ণ এক বছর হচ্ছে। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। আর ৬টি রোজা ঈদের পরে যে কোনো ৬ দিন রাখলেই যথেষ্ট।
শেষ কথা হলো- রমজানের শিক্ষা সারা বছর কাজে লাগাতে হবে। যে ভালো আমল করবে, সে ভালো ফল পাবে। আর যে মন্দ আমল করবে, সে মন্দ পরিণাম ভোগ করবে।
মূল লেখক: ইমাম ও খতিব, মসজিদুল ঈমান, ইয়েমেন
অনুবাদ: আব্দুল মতিন
[email protected]
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৭
এমএইউ/