নেক ইবাদতের প্রতিদান প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যেকোনো নেক আমল করবে, আমার কাছে তার ১০ গুণ সওয়াব প্রস্তুত আছে। ’ -হাদিসে কুদসি
১০ গুণ সওয়াব প্রদানের এই ওয়াদা দুনিয়ার কোনো মানুষের নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
আল্লাহর অভিপ্রায় হলো- প্রত্যেক মানুষ তার ইবাদতের মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। মানুষ তখনই আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র তার উদ্দেশে। সুখ-দুঃখে একমাত্র তার ইবাদত করবে, তাকে ভালোবাসবে। তার নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সর্বদা ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদতসমূহ সম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে মনোযোগী হবে।
আর নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা মানুষকে অতি সহজেই আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদত, যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ নিজে দেবেন।
মুমিন-মুসলমানরা যাতে শুধু রমজানের রোজা পালন শেষে থেমে না যায়, বরং আরও অল্প কয়েকটি রোজা রেখে পুরো বছরের রোজা রাখার মর্যাদা লাভ করতে পারে, সেই সুযোগ করে দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ফরজ রোজা পালন করল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ৬ দিন রোজা পালন করল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল। ’ -সহিহ মুসলিম
অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন রমজান মাসের রোজা রেখে তার সঙ্গে শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখল, সে এই রোজার কারণে আল্লাহর দরবারে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সওয়াব পেয়ে গেল।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে শাওয়াল মাসে ৬ দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। ’ -মুসনাদে আহমদ ও দারেমি
এ হাদিস দু’টি থেকে আমরা শিক্ষা পেয়ে থাকি, ক্ষুদ্র আমল কিন্তু অর্জন বিশাল। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহতায়ালার সীমাহীন দয়ার বহিঃপ্রকাশ। অল্প আমলে অধিক প্রতিদান প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।
কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতাস্বরূপ এই ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। আমাদের দৈনন্দিন কোনো ব্যস্ততা যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সে দিকে কঠোরভাবে খেয়ালা রাখতে হবে।
নফল আমলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। অর্থাৎ জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে আমাদের যেসব ভুলত্রুটি হয়, নফল রোজা তা দূর করতে সহায়তা করে।
নফল এই ৬টি রোজা রাখা যাবে শাওয়াল মাসের শুরু শেষ কিংবা মাঝামাঝি সময়ে। এ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে বা বিরতি দিয়েও রোজাগুলো পালন করা যাবে।
তবে, শাওয়ালের ৬ রোজার সঙ্গে রমজানের কাজা রোজা আদায় হবে না। উভয় রোজা আলাদা আলাদা রাখতে হবে। প্রথমে রমজানের কাজা রোজা রাখতে হবে, তারপর ছয় রোজা রাখতে হবে। যদি পুরো মাস কাজা রোজায় শেষ হয়ে যায় এবং নফল রোজা রাখার সুযোগ না পাওয়া যায় তবুও আল্লাহ বান্দার মনের আকাঙ্খার কারণে তাকে ওই ছয় রোজার সওয়াব দেবেন বলে অনেক ইসলামি স্কলার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, শাওয়ালের রোজা হচ্ছে নফল আর রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ। আর রমজানের কাজা রোজা আদায় করাও ফরজ।
প্রত্যেক সুস্থ সবল ব্যক্তির উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ৬টি রোজা রেখে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে ধন্য হওয়া এবং পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সমান সাওয়াব হাসিল করা।
কাউকে যদি শাওয়ালের এই রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তিনি রোজাগুলো রাখেন, তবে উদ্বুদ্ধকারীও রোজাদারের সমান সুযোগ পাবেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৭
এমএইউ/