ওই আয়াতে কিয়ামত দিবস সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের মোহ থেকে মানুষকে সচেতন হওয়ার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। সূরা হজের প্রথম দুই আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো।
কিয়ামতের দিন পাহাড়গুলোকে উপড়ে ফেলা হবে নিজ স্থান থেকে, সাগর ও মহাসাগরগুলো তালগোল পাকিয়ে ফেলবে, পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র ও আকাশগুলো দীর্ণ-বিদীর্ণ হবে তুলা বা বালুর মতো। আতঙ্কিত মানুষ নিজের হাত-পায়ের খবর রাখবে না, তারা হয়ে পড়বে উদ্ভ্রান্ত ও উন্মাদের মতো; দুনিয়া দেখা দেবে নতুনরূপে।
পরের আয়াতে এ বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, একদল মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান ও ধারণা না রেখেই তর্ক-বিতর্ক করে। কোনো দৃঢ় যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই অজ্ঞদের মতোই এক আল্লাহ এবং পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে। প্রবৃত্তির খেয়ালিপনা ও শয়তানের আনুগত্যের কারণেই এ অবস্থা হয়েছে তাদের। শয়তানের অনুসারীরা তো বিভ্রান্ত হবেই। তারা কোনোদিন খুঁজে পাবে না সৌভাগ্যের রাজপথ। পরের আয়াতে পরকাল বা কিয়ামতের অনিবার্যতার যুক্তি হিসেবে মাতৃগর্ভে ভ্রূণের পরিবর্তন এবং ভূপৃষ্ঠে গাছপালার প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সূরা হজের ৫ নম্বর আয়াতে ভ্রূণ থেকে জন্ম লাভ পর্যন্ত মানব শিশুর প্রাথমিক অস্তিত্বের নানা পর্যায়ের রূপান্তরের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মানুষেরা! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিহান হও, তবে (ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিণ্ড থেকে- তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি যাতে তোমরা বালেগ হও তথা শারীরিক ও চিন্তাগত পরিপক্কতা নিয়ে যৌবনে উপনীত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যায় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। এ সময় সে তার জানা বা জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকে না। ’
ভ্রূণ বিদ্যা সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যখন ছিল খুব অস্পষ্ট ও সীমিত সেই যুগে ভ্রূণের নানা পর্যায় সম্পর্কে যে নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে কোরআন তা এ মহাগ্রন্থের অন্যতম অলৌকিকতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর। কারণ, ১৪শ’ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বিজ্ঞান আজ মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে যেসব তথ্য দিচ্ছে তার সঙ্গে পবিত্র কোরআনের এ সংক্রান্ত তথ্যের কোনো সংঘাত বা অমিল নেই। আর পবিত্র কোরআনের এই অলৌকিকতা প্রমাণ করে যে, নিঃসন্দেহে কোরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৃহত্তম ও প্রকৃত উৎস।
এরপর পবিত্র কোরআনে শিশুর জন্মোত্তর বিকাশ ও পরিপূর্ণতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মানব শিশু বড় হতে হতে কিশোর বা তরুণ, যুবক ও মধ্যবয়সী হয়। এ পর্যায়ে তার মানবীয় ক্ষমতা ও যোগ্যতাগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। এরপর শুরু হয় দুর্বলতার পালা। এই মানুষ বৃদ্ধ বয়সে অনেক ক্ষমতা ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। বৃদ্ধরা নিজের জানা অনেক জ্ঞান ও বিষয় স্মরণ করতে পারে না। সচেতনতা, চিন্তা ও বুদ্ধির ধার কমে গিয়ে ধীরে ধীরে সেসব বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়।
ফল পাকার পর যেমন তা এক সময় গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনিভাবে বৃদ্ধ মানুষও একদিন বিদায় নেয় জীবন্ত মানুষদের তালিকা থেকে। এই যে শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মানুষের জীবনের গতিপথ, তার সবটুকুই আল্লাহর অশেষ ক্ষমতা আর মহাকৌশলের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। অথচ মানুষ সতর্ক হয় না। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
এমএইউ/