ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ভিয়েতনামে মুসলমানদের ধর্মচর্চার পরিধি দিন দিন বাড়ছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
ভিয়েতনামে মুসলমানদের ধর্মচর্চার পরিধি দিন দিন বাড়ছে ভিয়েতনামে মুসলমানদের ধর্মচর্চার পরিধি দিন দিন বাড়ছে

ভিয়েতনাম ইন্দো-চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। দেশটির উত্তরে গণচীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। হানয় ভিয়েতনামের রাজধানী।

দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ভিয়েতনামের ৬টি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানরাই হচ্ছে সবচেয়ে ছোট জনগোষ্ঠী।

সরকারি হিসাবমতে প্রায় ১০ কোটি অধিবাসীর দেশ ভিয়েতনামে মুসলমানের সংখ্যা ১ লাখের বেশি।

পুরো ভিয়েতনামে মসজিদ রয়েছে মাত্র ৭৯টি। যার অধিকাংশই দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থিত। চলতি বছরের শুরুতে ভিয়েতনামের চিয়াওডক শহরের গিয়াং প্রদেশে উদ্বোধন করা হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটি তুরস্কের একটি সাহায্য সংস্থার উদ্যোগে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। দ্বিতল এ মসজিদে একসঙ্গে ১২শ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ভিয়েতনামেও দেখা যায়, মসজিদের মিনার থেকে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পরার পর সাদা টুপি মাথায় ও সারং বা বর্নাঢ্য লুঙ্গি পরিহিত মানুষজন স্থানীয় মসজিদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।  

এ দৃশ্য দেখে কারো মনে গতে পারে তিনি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেই আছেন। কিন্তু না, এটা ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির শহরতলী এলাকার নিয়মিত দৃশ্য। হো চি মিন সিটির শহরতলীতে অবস্থিত ডিস্ট্রিক্ট-৮ নামে অভিহিত একটি অঞ্চলে মুসলমানরা বসবাস করেন। এসব মুসলমান চাম মুসলিম নামে পরিচিত।
হো চি মিন শহরের একটি মসজিদ
ভিয়েতনামের সংস্কৃতি চীনাদের দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হলেও এই মুসলমানরা আলাদা সংস্কৃতি বজায় রেখে চলছেন, যদিও সেখানে তারা একেবারেই ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী।

প্রায় দেঢ় হাজারের মতো মুসলমান এই শহরতলীতে বসবাস করেন। তাদের রয়েছে হালাল রেস্তোরাঁ, বড় আকারের একটি মসজিদ ও মাদরাসা। এখান থেকে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য প্রতি বছরই ছাত্রদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।  

গবেষকরা বলছেন, চামদের শতকরা ৮০ ভাগই ইসলামি অনুশাসন মেনে চলে।  

ভিয়েতনামের মুসলমানরা সবচেয়ে ছোট জনগোষ্ঠীর হলেও তাদের ধর্মচর্চার পরিধি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় মাদরাসার ডেপুটি ম্যানেজার হাজী মুসা (৫২) বলেন, আমরা শুধুমাত্র আমাদের ধর্ম পালন করি। আমরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই না। তিনি মালয় ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। আরবিও বেশ জানেন। তিনি বলেন, হো চি মিন সিটিতে এক ডজনের বেশি ইমাম আছেন। মাঝে-মধ্যে বিদেশি ইমামও এখানে আসেন বিশেষকরে মালয়েশিয়া থেকে। সকল ইমাম ভিয়েতনামেই ট্রেনিংপ্রাপ্ত।

তাদের প্রচেষ্টায় ভিয়েতনামী ভাষায় পবিত্র কোরআন অনুবাদ করা হয়েছে। কলারবিহীন শার্ট ও সারং পরিহিত হালকা পাতলা গড়নের হাজী মুসা ১৯৬০-এর দশক থেকে ডিস্ট্রিক্ট-৮ এ বসবাস করছেন।  

ওই সময় থেকেই চামরা এখানে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রথমদিকে চাম মুসলমানরা এখানে কাঠ ও খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। ১৯৯০-এর দশকে এখানে বিদ্যুৎ আসে। এর অনেক পরে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয় যার মাধ্যমে মূল শহরের সঙ্গে এর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। উন্নত সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার ফলে এলাকাটির দ্রুত উন্নয়ন ঘটে।
হো চি মিন শহরের জামিউল মুসলিমিন মসজিদ ও একজন মুসলিম
হো চি মিন সিটিতে ১৬টির মতো মসজিদ আছে। এর মধ্যে বিদেশি সহায়তায় বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। চামদের অঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও রেডক্রিসেন্টের অর্থসাহায্য ২০০৬ সালে জামিউল আনোয়ার মসজিদটি পুনঃনির্মিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সমর্থন পেলেও চাম মুসলমানরা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।  

অনেক বয়স্ক মুসলমান পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। অধিকাংশ মুসলমানের নাম আরবিতে রাখা হয়। চাম মুসলিম মহিলারা সাধারণ হিজাব ও টিলেঢালা পোশাক পরেন।  

আল গিয়াংয়ের একটি ছোট শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জুফরি গত ১৮ মাস ধরে একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করছেন। মালয়েশিয়ায় গিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

-মুসলিম ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।