কেউ নামাজে পাঠ করেন, কেউ কোরআন তেলাওয়াত করেন, কেউ শিক্ষা দান করেন, কেউ অধ্যয়ন করেন, কেউ এর দাওয়াত ও প্রচারের কাজ করেন, কেউ তাফসির করেন, কেউ গবেষণা করেন, কেউ মুখস্থ করেন।
পবিত্র কোরআনের মতো এত অধিক পঠিত গ্রন্থ পৃথিবীতে আর একটিও নেই।
পৃথিবীতে যত ধর্মের ধর্মগ্রন্থ আছে, সেসব ধর্মের সব অনুসারীর জন্য ধর্মগ্রন্থ পড়া জরুরি নয়। কোনো কোনো ধর্ম তো সাধারণ অনুসারীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পড়া এবং স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। সেসব ধর্মে ধর্মগ্রন্থ চর্চার অধিকার কেবল বিশেষ শ্রেণীর পুরোহিতদের জন্য সংরক্ষিত।
ইসলামের অবস্থান এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলাম প্রচলিত অর্থে কোনো ধর্ম নয় বরং ইসলাম মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা। এ জীবনব্যবস্থার মূল উৎস হলো- কোরআনে কারিম। ইসলামে সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দ থেকে নিয়ে একজন সাধারণ মুসলিম পর্যন্ত সবার জন্য ইসলামের বিধান সমানভাবে প্রযোজ্য এবং সমানভাবে অনুসরণীয়। সে জন্য ইসলাম তার মূল উৎস কোরআনকে বিশেষ এবং নির্বিশেষে সব মুসলিমের জন্য অবশ্য পাঠ্য করে দিয়েছে। এটি অমুসলিমদেরও পাঠ্য।
তাই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণের সূচনালগ্ন থেকে সর্বযুগেই একেবারে সাধারণভাবে মুসলিমরা কোরআন শিখছেন, কোরআন পড়ছেন, কোরআন তেলাওয়াত করছেন অবিরত।
মুসলিমদের ঘরে ঘরে দিনরাত কোরআন পাঠ হয়। প্রতিটি যুগে কোরআন হিফজ করে স্মৃতিতে ধারণ করছে অসংখ্য মানবসন্তান। পাঠ শিখছে হিফজ করে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা এবং বয়স্করাও।
সারা বিশ্বে তারা কোরআনের পাঠ শিখছে ও শিখাচ্ছে। পাঁচ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক নামাজ ছাড়াও মুসলিমরা পড়ছে সুন্নত ও নফল নামাজও। আর সব নামাজের প্রতি রাকাতেই তাদের জন্য কোরআন পাঠ করা বাধ্যতামূলক।
তাই দিনরাত মুসলিমরা নামাজে কোরআন পাঠ করছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন পড়ানো হয়, পড়া হয়। মসজিদ, মক্তব, মাদরাসা সর্বত্র কোরআন পাঠ, শিক্ষা ও চর্চা হয়। মুসলিমরা তাদের অনুষ্ঠানাদি কোরআন পাঠ করেই শুরু করে। তারা কেরাত (পাঠ) প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। তারা কোরআনের দরস ও তাফসির মাহফিলের আয়োজন করে থাকে।
বর্তমান সময়ে অডিও ভিডিও সিডি ইত্যাদির মাধ্যমে ঘরে, অফিস-আদালতে, যানবাহনে সর্বত্র প্রচারিত হচ্ছে, কোরআনের পাঠ ও কোরআনের তেলাওয়াত। রেডিও, টিভি, মোবাইল, ওয়েবসাইট সর্বত্রই তেলাওয়াত হচ্ছে- কোরআন। এভাবে বিশ্বময় প্রতি মুহূর্তে পঠিত হচ্ছে- কোরআন। বিশ্বে অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের এত বিপুল পঠন-পাঠন নেই।
বিশ্বে খ্রিস্টানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কোরআনের চেয়ে তাদের বাইবেলের অনুবাদ সংখ্যাও অত্যধিক। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য তারা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে এবং সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে ধর্ম প্রচার করছে। সে হিসেবে ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে মুসলমানদের চেষ্টা নেহায়েতই কম। এর পরও কোরআনের পাঠক বিশ্বে অনেক বেশি।
পৃথিবীতে অন্য কোনো গ্রন্থের হাফেজ নেই। কিন্তু কোরআন এখনও বহু লোক মুখস্থ করেন। বর্তমান বিশ্বে লাখ লাখ কোরআনের হাফেজ রয়েছেন। কোরআনের হাফেজদের মুখে মুখে বিশ্বময় প্রতি মুহূর্তে পঠিত হচ্ছে কোরআন। বিশ্বে এত বিপুল-ব্যাপক পঠন-পাঠন আর কোনো গ্রন্থে নেই। প্রতিটি মুহূর্তে বিশ্বের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই পঠিত হচ্ছে- কোরআন মজিদ।
কোরআন বিশ্বের সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। কোনো গ্রন্থের ওপর এত বেশি আলোচনা ও গবেষণা হয়নি। কোনো গ্রন্থ কোরআনের মতো সারাজীবন বারবার পড়া হয় না। বর্তমান বিশ্বে কোরআনের পাঠক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কোরআনে কারিমের এই ব্যাপক পাঠ এক মহাবিস্ময়। মানবহৃদয় বিমুগ্ধ করা এক বিস্ময়কর সিঁড়ি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
এমএইউ/