ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আদর্শ সমাজ গঠনের প্রথম সোপান পরিবার

মাহমুদা নওরিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৭
আদর্শ সমাজ গঠনের প্রথম সোপান পরিবার আদর্শ সমাজ গঠনের প্রথম সোপান পরিবার

আল্লাহতায়ালার একত্ব ও একচ্ছত্র কর্তৃত্বের বাস্তবায়ন হলো- পরিবার। তাই সর্বপ্রথম আল্লাহমুখি হতে হবে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে।

এছাড়া পরিবারই যেহেতু শিশুর প্রথম পাঠশালা, তাই এখানে আল্লাহর ক্ষমতা, সার্বভৌমত্বের শিক্ষা দিতে হবে তাকে। তার মনে আল্লাহর ভয় তৈরি করতে হবে।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেন সে সর্বদা তৎপর থাকে তা নবী-রাসূল ও সাহাবিদের জীবনের গল্প শুনিয়ে তার মনে উন্নত জীবনের একটা মডেল দাঁড় করাতে হবে।

বস্তুত একজন মুসলিম পরিবার থেকে তার জীবনাচরণ শিক্ষা লাভ করে। সে জানে প্রভুর ডাকে সুবহে সাদিকে ফজরের আজান শুনে তাকে উঠতে হবে। দিনে পাঁচবার তাকে এ ডাকে সাড়া দিতে হবে। সে জানে সকালে ও রাতে কোরআনকে তার সঙ্গী বানাতে হবে। প্রতিটি কাজের আগে আল্লাহর নাম নিতে হবে ও তার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। তার সব কাজের সূচনা হবে সালাম দিয়ে, তার রুচি, পছন্দ, বিনোদন এবং জীবনাচরণ একজন কাফের বা মুশরিকের রুচি, পছন্দ, বিনোদন এবং জীবনাচরণ থেকে পার্থক্য হবে। যা দেখে তাকে হাজার লোকের ভীড়ে আলাদা করে নেওয়া যাবে।  

এমন আদর্শ ও সংস্কৃতিতে গড়া একজন পূর্ণাঙ্গ পরিপূর্ণ মানুষ শুধু সমাজের জন্য নেয়ামত নয় বরং সমাজ গড়ার কারিগর।

এমন গুণসম্পন্ন মানুষ জীবনের লাভ-ক্ষতির হিসাব, কিংবা মর্যাদার মাপকাঠি তারা দুনিয়ার মূল্যমান ধরে করবে না বরং পরকালের জন্য লাভজনক কাজগুলোকেই তারা অগ্রাধিকার দেবে। এ প্রসঙ্গে সূরা তাহরিমের ৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে তোমাদের পরিবার পরিজনকে বাঁচাও। ’

ইসলাম মনে করে, আদর্শ পরিবার হবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবার। এখানে এক সম্পর্ক অন্য সম্পর্কের প্রতিবন্ধক নয় কখনোই। জ্ঞানের স্বল্পতা কিংবা নিজ স্বার্থের প্রতি অতিরিক্ত লোভ কিংবা হেকমতের অভাব তাকে একটি হকের ব্যাপারে অধিক সচেতন কিংবা অন্য হকের ব্যাপারে উদাসীন করে তোলে।  

আল্লাহতায়ালার পরেই পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জন করার তাকিদ রয়েছে কোরআনে ও হাদিসে। পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ, বিশেষত মায়ের পদতলে জান্নাতের ঘোষণা- এটাই প্রমাণ করে যে, একজন সন্তান কোনো অবস্থাতেই বাবা-মাকে কষ্ট দিতে পারে না। সূরা বনি ইসরাইলে ‘উহ’ পর্যন্ত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। সে অবস্থায় অন্য কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া বা বিরক্তি প্রকাশের তো সুযোগই নেই। ঠিক একইভাবে পিতা-মাতাকেও সন্তানের হকগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে।

আদর্শ পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবে মধুর। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একে অন্যের পোশাকস্বরূপ। ’ ঠিক যেমন পোশাক দেহের অসামঞ্জস্যতাকে ঢেকে রাখে তেমনি স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের দোষ অন্যদের কাছ থেকে গোপন রাখাই কর্তব্য। কোরআন যেমন স্বামীর কর্তব্য হিসেবে স্ত্রীর খাওয়া ও পরার ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাকিদ দিয়েছে তেমনি স্ত্রীর জন্যও নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত, সন্তানের দেখাশোনা, সম্পদের আমানত রক্ষার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।

একজন স্বামী তার স্ত্রীর হক আদায়ে বাধ্য ঠিক তেমনি একজন স্ত্রীও তার স্বামীর আনুগত্য করতে বাধ্য। এ অবস্থায় প্রচলিত ‘বউ-শ্বাশুড়ির জটিল সম্পর্ক’কে পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়- যদিও পুত্রবধূকে শরিয়ত প্রত্যক্ষভাবে বাধ্য-বাধকতা দেয়নি শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করার, কিন্তু স্ত্রীর কারণে পুত্র যদি মায়ের হক আদায়ে ব্যর্থ হয়, কিংবা মায়ের অসন্তোষের কারণ হয়- তবে স্ত্রীকে সে দায় অবশ্যই নিতে হবে।

আর একজন পরকালমুখি আল্লাহভীরু নারীর পক্ষে নিজের সুবিধা-অসুবিধার জন্য স্বামীকে জাহান্নামি করাটা কিংবা মায়ের কষ্টদানকারী সন্তান বানানোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ না। তাই কিছুক্ষেত্রে হেকমত, পরিবেশ ও উদারতার কথা চিন্তা করে বাবা-মায়ের হক এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হক আদায় করা প্রয়োজন। এতেই রয়েছে কল্যাণ।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।