শিবনগরের গেদু মিয়ার মসজিদ। বেশ খানদানি প্রবেশদ্বার পেরিয়ে কারও দেখা নেই।
মসজিদের মুসুল্লি প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করতেই চোখেমুখে হাতাশা নিয়ে বললেন, ‘আমার এলাকায় আমি ছাড়া কোনো মুসলিম নেই। ১৯৫০ সালে ৪০ হাজার লোক বের হয়ে যায়। আমি বাবার কথা রক্ষার্থে মসজিদ এই এলাকা ও মসজিদ ছেড়ে যাইনি। বাবা বলেছিলেন, ‘তুমি মসজিদ ছেড়ে যেয়ো না। কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। আসলেও কেউ কিছু করেনি। হিন্দুরাও এসেছে। ভালোবেসেছে। আমি এখনও আছি, ভালোই আছি। ’
তাহলে এখানে নামাজ পড়ে কারা?
এখানে মূলতঃ নামাজ পড়েন বাইরের লোক। কলকাতা, দিল্লি, আসাম, শিলং ও ঢাকা থেকেও লোক আসে। এরা সবাই এখানে কাজ করে। তারা শুধু শুক্রবার জুমার নামাজে আসে। তবে আমি দৈনিক আজান দেই বটে কিন্তু জামাত নাই। ৫ ওয়াক্ত আমি একাই পড়ি। ৫ জনও হয় না, ৩ জনও না। এখানে নাই নাইই। শুধু জুমাটা হয় বাইরের লোক দিয়ে। শুক্রবার ২/৩ কাতার হয়। ঈদে ৫ হাজার লোক হয়’ বলছিলেন আবুল ফজল খুদরি।
তিন গম্বুজব বিশিষ্ট এই সুন্দর মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল বারিক খান ওরফে গেদু মিয়া। তার নাম অনুসারেই মসজিদটি পরিচিতি পায়। ১৯৩৯ সালে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় গেদু মিয়া ঠিকাদার ছিলেন। আগরতলার বর্তমান বিমান বন্দরের স্থানে ব্রিটিশদের ঘাঁটি নির্মাণের ঠিকাদারি পেয়েছিলেন। রোজগারও হয় বেশ। সেই আয় থেকে মসজিদ নির্মাণে ব্যয় করেন। ঢাকা থেকে ৩০ জন দক্ষ মিস্ত্রি আনেন। দিনরাত কাজ চলে, ৩ বছরে শেষ হয় নির্মাণ কাজ। পুরো মসজিদ নির্মাণে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকার মতো। তখন এই মসজিদে বহু দূর থেকে মানুষ নামাজ আদায় করতে আসত।
গেদু মিয়া চাননি বাইরে থেকে ইমাম আসুক। মামাতো ভাই হাফেজ আবদুল গণিকে দায়িত্ব দেন ইমামতির। হাফেজ আবদুল গণি থাকলে নামাজ পড়াতেন ছেলে। তিনি জানালেন, মসজিদ ও সংলগ্ন ঈদগাহ মিলিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের দানের সাড়ে ৩ কানি জায়গা। মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটি ১৫ গণ্ডার। গেদু মিয়া পুকুর ক্রয় করেছিলেন মুসল্লিদের অজু-গোসলের সুবিধার্থে।
মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা গেদু মিয়ার পূর্বপুরুষরা ছিলেন দিল্লির বাসিন্দা।
মসজিদের ভেতরে ৩টি ও বারান্দায় ২টি কাতার। প্রতি কাতারে প্রায় ২৫ জন নামাজ পড়তে পারেন। প্রতি ঈদে ২টি বড় জামাত হয়। । তখন মাঠ ভরে যায় মুসুল্লিতে। মসজিদের সামনে রয়েছে দু’টি কবর। সেখানে গেদু মিয়া ও তার স্ত্রী সমাহিত।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এমএইউ/