মসজিদে মাশআরে হারাম
মুজদালিফা। এটি মক্কার নিকটবর্তী একটি সমতল এলাকার নাম।
৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর হজপালনকারীরা মুজদালিফায় এসে রাত্রিযাপন করেন। এটা হজের অংশ। এখানে রাতযাপন শেষে মিনায় শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য এখানে থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়।
মুজদালিফায় একটি ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে। নাম মাশআরে হারাম। যাকে মুজদালিফার মসজিদও বলা হয়। মুজদালিফার কুজা পাহাড়ের নিচে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অবস্থান করেছিলেন। এর সামনে মুজদালিফা ৫ নম্বর রোডের পাশে মসজিদটি অবস্থিত। প্রায় পনেরো হাজার মুসল্লি একসঙ্গে এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের পেছনের দিকে ৩২ মিটার উচুঁ দু’টি মিনার আছে। অনেক দূর থেকে মিনার দু’টি স্পষ্ট দেখা যায়।
মসজিদে জিন
জিন মসজিদ মক্কার একটি বিখ্যাত মসজিদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। তবে এটা জিনদের বানানো কোনো মসজিদ নয়, কিংবা একদিনে গায়েবিভাবে হয়েছে এমনও নয়।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কা নগরীতে যে স্থানে জিনরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলো, পরে সেখানে একটি মসজিদ গড়ে ওঠে। সেটাই মসজিদে জিন নামে প্রসিদ্ধ।
অন্য বর্ণনায় আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জিনদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার সময় হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) কে একটি বৃত্ত এঁকে এখানে রেখে যান এবং বলে যান আমি না আসা পর্যন্ত এই বৃত্ত থেকে বের হবে না।
মসজিদটি মক্কার পুবে হাজুন পাহাড়ের নিচে এবং হাজুন ব্রিজের পঞ্চাশ মিটার দূরে অবস্থিত। মসজিদের পাশের রাস্তার নাম জিন মসজিদের সড়ক। এই মসজিদের একটু দূরে মক্কার বিখ্যাত গোরস্থান জান্নাতুল মোয়াল্লা অবস্থিত। ৬০০ বর্গমিটারের মসজিদটি দেখতে হাজিদে ভিড় দেখা যায়।
ইতিহাসে আছে, একদিন এখানে মহানবী (সা.) নামাজ আদায়কালে আকাশপথে গমনরত একদল জিন কোরআনের অভিনবত্ব ও সুমধুর সুরে আকৃষ্ট হয়ে থমকে যায় এবং এ ঘটনা তারা তাদের জাতির কাছে গিয়ে ব্যক্ত করে।
এ ঘটনা কোরআনে বলা হয়েছে এভাবে, ‘(হে নবী) বলুন, আমার প্রতি অহি নাজিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করেছে, অতঃপর (ফিরে গিয়ে নিজ জাতির লোকদের) বলেছে; আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি। যা সত্য ও সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়, তাই আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমরা আর কখনও আমাদের রবের সঙ্গে কাউকে শরিক করবো না। ’ –সূরা জিন: ১-২
অত:পর তারা এ মসজিদের স্থানে এসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনে ইসলাম গ্রহণ করে।
মসজিদে আয়েশা বা মসজিদে তানঈম
মসজিদে আয়েশা মক্কার তানঈম এলাকায় অবস্থিত। হেরেমের বাইরে এটি মক্কা থেকে সর্বাধিক নিকটবতী স্থান। মক্কা থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে মক্কা-মদিনা রোডে আল হিজরা এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদ থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধা হয়।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) এখান থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে উমরা করেছিলেন। পরে সেখানে একটি বিশাল মসজিদ গড়ে উঠে। মসজিদটি ইসলামি শিল্পনৈপুণ্যের এক অনুপম নিদর্শন।
বিদায় হজের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)কে তার ভাই হজরত আবদুর রহমান (রা.)-এর সঙ্গে হারামের বাইরে এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
এ কারণে এখান থেকে মক্কাবাসীরা ওমরার জন্য এখান থেকে ইহরাম বেঁধে থাকেন। বিদেশি হাজিরাও ওখান থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে থাকেন। অবশ্য এটা নিয়ে ইসলামি স্কলারদের মাঝে বিতর্ক আছে।
মক্কা থেকে এখানে আসতে বাস ভাড়া ২ রিয়াল, আর ট্যাক্সি ভাড়া ৫ রিয়াল। সারাক্ষণ নফল ওমরার ইহরামের জন্য আসা হাজিদের ভিড় থাকে। বিশাল এই মসজিদের দু’টি মিনার ও একটি গম্বুজ অনেক দূর থেকে দেখা যায়। মসজিদটি খেজুর গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমএইউ/জেডএম