মেরাজের রাতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.) কে লক্ষ করে বলেন, ইসরা এবং মেরাজের ব্যাপারে আমার কওম আমাকে সত্যায়ন করবে না। একথা শুনে হজরত জিবরাইল (আ.) বলেন, আবু বকর আপনাকে সত্যায়ন করবেন।
হজরত আবু বকর (রা.) জাহেলি যুগেও সৎ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনিও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মতো পূর্ব থেকেই মদ এবং প্রতিমা পূজা থেকে দূরে ছিলেন।
তিনি একাধারে মিশুক ও উত্তম চরিত্রের মানুষ ছিলেন। একজন সফল ব্যবসায়ীও ছিলেন। প্রজ্ঞা, চরিত্র মাধুর্য এবং অভিজ্ঞতার কারণে আরবের লোকেরা হজরত আবু বকর (রা.)-এর মজলিসে যেতেন।
একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আবু বকর! নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর রাসূল এবং নবি। তার বার্তা উম্মাহ পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমি তোমাকে এক আল্লাহর প্রতি আহবান করছি। আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে আমারা কথা সত্য। আমি তোমাকে আল্লাহর দিকে আহবান করছি। তিনি অদ্বিতীয়। তার কোনো শরিক নেই। তিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। ’
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু বকর (রা.)-এর সামনে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এর প্রতিক্রিয়া তার ওপর এতোটাই পড়ে যে, তিনি তৎক্ষণাত ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিজের পূর্বের ধর্মকে ‘আল বিদা’ বলতে বিলম্ব করেননি।
স্বাধীন পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমানগ্রহণকারী ব্যক্তি হলেন হজরত আবু বকর (রা.)।
ইসলাম গ্রহণের পর হজরত আবু বকর (রা.) নিজের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঘরে ঘরে যেয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তাদের সামনে ইসলামের সত্যতা তুলে ধরে, সত্য ধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এর ফলে তদানিন্তন আরবের সম্ভ্রান্ত একটি শ্রেণি ইসলামে দীক্ষিত হন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যারা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণে ধন্য হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কৃতদাসদের সংখ্যাও ছিলো উল্লেখযোগ্য। ইসলাম গ্রহণের কারণ কুরাইশের লোকেরা তাদেরকে সীমাহীন অত্যাচার করে। হজরত আবু বকর (রা.) তাদেরকে নিজের পয়সা দিয়ে খরিদ করে মুক্ত করে দেন। আর এভাবেই তারা কুরাইশদের নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ব্যাপারে বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে আমার উম্মতের ওপর সবচেয়ে দয়াবান ব্যক্তি হলো- আবু বকর। ’
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) পার্থিব যশ-খ্যাতির প্রতি লালায়িত ছিলেন না। আল্লাহর সন্তুষ্টিই ছিলো- তার জীবনের একমাত্র চাওয়া। একদিন তার পিতা বলেন, ‘প্রিয় পুত্র! তুমি দুর্বল লোকদেরকে মুক্ত করেছো। তোমরা তো শক্তিশালী লোকদেরকে মুক্ত করা উচিত। যেন তারা তোমার উপকারে আসে। বিপদের তোমার পক্ষে লড়তে পারে। পিতার কথার জবাবে তিনি বলেন, আমি এই কাজ শুধুই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করে থাকি। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমার নেই। তার এই কথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সূরা লাইলের পাঁচ থেকে একুশ নম্বর আয়াত নাজিল করেন।
ইসলাম পথে চলতে সামনে আসা যাবতীয় বিপদ-আপদ মোকাবেলায় হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে ছিলেন। হিজরতের সময়ও তিনি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গেই ছিলেন। সব সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন। নবম হিজরিতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে মুসলমানদের সর্বপ্রথম হজের আমির নিযুক্ত করেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশাতে হজরত আবু বকর (রা.) তার জায়নামাজে ইমামতির সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি ছিলেন মুসলমানদের সর্বপ্রথম খলিফা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পর তিনিই উম্মাহর সবচেয়ে মহান ব্যক্তিত্ব।
লেখক: মুহাদ্দিস, গবেষক
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/