এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ’ -সূরা ইসরা: ৭০
এ প্রসঙ্গে কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
বস্তুত আল্লাহতায়ালা বাকি সৃষ্টিকে মানুষের সেবা ও উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন। চাই মানুষ আল্লাহর অনুগত হোক বা অবাধ্য। অবশ্য আল্লাহর কাছে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য পরকালীন জীবনে যা রয়েছে তা অনেক শ্রেষ্ঠ।
কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালোবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তার নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তণসস্থল। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৪
করুণাময় আল্লাহতায়ালার দয়া-অনুগ্রহ যদি শুধুমাত্র তার অনুগত বান্দাদের মধ্যে সীমিত থাকতো, তবে এ পৃথিবী শুধুমাত্র তার অনুগত বান্দাদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকতো। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। দুনিয়ায় আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতরাজি মুসলিম-অমুসলিম, মুত্তাকি-পাপী সবার জন্য সমান। পার্থিব জীবনে আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ উন্মুক্ত, অফুরান। আর এ জন্যই তিনি রাহমান।
সৃষ্টির সূচনা থেকে নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত আমরা আল্লাহর নিয়ামতরাজির মধ্যে ডুবে আছি। এসব নিয়ামত আমাদের কষ্টার্জিত নয়; না চাইতেই পেয়েছি। তাই আমাদের বিবেক-হৃদয়ে টনক নড়ে না। আমরা ঘুণাক্ষরেও ভাবি না।
অথচ আমরা যদি আল্লাহ প্রদত্ত কোনো একটা নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে গোটাজীবন সেজদায় পড়ে থাকি তবুও তা যথেষ্ট হবে না। ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- এসব বিষয়ে মানুষের একটু চিন্তা-ভাবনা, জীবনে আল্লাহর আরও অনেক অনুগ্রহ প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে। বিষয়টি কোরআনে আল্লাহ বলেছেন এভাবে, ‘তোমারা আমার নিয়ামতরাজির কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাদের জন্য আমার নিয়ামত বাড়িয়ে দেবো। ’ -সূরা ইবরাহিম: ৭
বর্ণিত আয়াত মানুষকে শিক্ষা দেয়, ছোট-বড় প্রতিটি নেয়ামতের জন্য আল্লাহর দরবারে সন্তুষ্টচিত্তে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুস্থতার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং সময়কে অযথা নষ্ট না করে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করা। ধন-সম্পদের জন্যও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি সামর্থ্যানুযায়ী সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করা।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সুখ-দুঃখ, স্বচ্ছলতা-দারিদ্রতা, সুস্থতা-অসুস্থতা তথা সর্বাবস্থায় শোকরগুজার থাকা।
এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ হলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল’ তথা সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। অর্থাৎ সুখে-দুঃখে জীবনের ওপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা।
এমন অবস্থার অনেক ফজিলত রয়েছে। এমন মনোভাবের প্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হবেন এবং নিয়ামতসমূহ বাড়িয়ে দেবেন।
আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় না করা পাপের কাজ। এমন কাজ না করতে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা আমার নিয়ামাতরাজির অস্বীকার করো, তবে জেনে রাখো নিশ্চয় আমার শাস্তির বিধান অবশ্যই কঠিন। ’ -সূরা ইবরাহিম: ৭
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/