দেশটির আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এ দেশের আয় ও জীবনযাপন ব্যয় দু’টিই বেশ ওপরের দিকে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার এক জরিপে প্রকাশ করেছে, চেক প্রজাতন্ত্রের ৪০ শতাংশ মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। আর বাকিরা চার্চে গিয়ে যে যার মতো ধর্মচর্চা করেন।
চেক প্রজাতন্ত্র একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। দেশটিকে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের মতো। পোশাকের বিষয়ে দেশটিতে কোনো আইন নেই। তার পরও চলতি বছরের শুরুতে হিজাব নিয়ে সোমালিয়ার এক শরণার্থীর করা মামলা খারিজ করে দেয় দেশটির আদালত।
মামলার বাদী ওই শরণার্থীর নাম আয়ান নূর। একটি নার্সিং স্কুলে তাকে মাথায় স্কার্ফ পরতে নিষেধ করা হয়। তখন নূর ওই স্কুলের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ এনে এই মামলা করেছিলেন।
সম্প্রতি আল জাজিরার রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমরা প্রতিনিয়ত বর্ণবাদী ও বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হচ্ছেন। যদিও দেশটিতে জনসংখ্যার প্রতি হাজারে মুসলমানের সংখ্যা দুইজনেরও কম।
নানাবিধ অবহেলা ও বৈষম্য সত্ত্বেও দেশটিতে এগিয়ে যাচ্ছেন মুসলমানরা। মুসলমানদের এমন অগ্রযাত্রাকে ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করে কট্টর ডানপন্থীরা নেমেছেন ইসলাম বিরোধীতায়। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চেক-জাপানিজ উদ্যোক্তা ও রাজনীতিক তোমিও ওকামুরা।
ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন এই নেতা। তার নীতি হলো- ‘ইসলামকে না বলুন, সন্ত্রাসকে না বলুন। ’ গত অক্টোবরের নির্বাচনে তার দলের অভূতপূর্ব উত্থান হয়েছে ইসলামবিদ্বেষকে পুঁজি করে। আর এই এজেন্ডা নিয়ে পার্লামেন্টে তৃতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছে তারা।
রাজনীতিকদের এমন ভাষা ও মনোভাবই মূলত দেশটিতে ইসলামবিদ্বেষ জাগিয়ে তুলছে। ইউরোপের আর কোনো দেশে এমন চিত্র সাধারণত দেখা যায় না।
আরও কয়েকটি ধর্মের মতো ইসলাম সরকারিভাবে স্বীকৃত ধর্ম চেক প্রজাতন্ত্রে। তবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় বিষয়ে পূর্ণমাত্রায় স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগ পান না। মুসলমানদের স্কুল-মাদরাসা স্থাপন কিংবা জনসমাবেশ স্থলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার অনুমতি নেই।
রাজধানী প্রাগের মুসলিম কমিউনিটির নেতা হাসান সাঙ্কা (৫৮) বলেন, ‘মুসলিমদের প্রায় সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ কিংবা এ রকম বড় পেশায় যুক্ত। তা সত্ত্বেও কিছু রাজনৈতিক দল আমাদের অধিকার হরণ করে ইসলামকে মুছে ফেলতে চায়। এর পেছনে আসল কারণ হলো, মুসলমানরা সংখ্যালঘু হলেও তারা বিভিন্ন উচুঁ পদে আসীন। এটা তাদের সহ্য হয় না। আর তাই মুসলমানদের বিরোধিতা করে। ’
তবে কট্টরপন্থার উত্থান হলেও দেশটিতে ইসলাম ধর্মকে সরাসরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে না। কারণ, চেক প্রজাতন্ত্রের আইনে সেটি বৈধও নয়। দেশের সাংবিধানে বলা আছে, ‘কেউ ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। ’
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
এমএইউ/