পক্ষান্তরে কোনো মন্দ লোক যখন রাগান্বিত হয়, তখন সে ভুলে যায় ভদ্রতা এবং তার আসল রূপ বের হয়ে যায়।
গালি দেওয়া, অশ্লীল কথা বলা ও অশ্লীলতা ছড়ানো আমাদের সমাজে একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়ে গেছে।
অথচ ইসলামে অশ্লীল কথা বলা, কাউকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ ও গোনাহের কাজ। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! পুরুষরা যেনো অন্য পুরুষদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেনো মহিলাদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রুপ করো না এবং পরষ্পরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর গোনাহের কাজে প্রসিদ্ধি লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম। -সূরা হুজরাত: ১১
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন কখনও দোষারোপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না। ’ –সুনানে তিরমিজি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আরজ করলেন, আমাদের মাঝে নিঃস্ব তো ওই ব্যক্তি যার কোনো ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সম্বল নেই। অতঃপর নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা, জাকাত (ও অন্যান্য মকবুল ইবাদত) নিয়ে আসবে কিন্তু তার অবস্থা এমন হবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারও মাল ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত ঘটিয়েছে বা কাউকে প্রহার করেছে।
তখন এক হকদারকে (তার হক পরিমাণ) তার নেকি হতে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তাদের হক আদায়ের পূর্বে তার নেকি শেষ হয়ে যাবে। তখন ওই সমস্ত (হক পরিমাণ) হকদার ও মজলুমের গোনাহ (যা তারা দুনিয়াতে করেছিল) তাদের নিকট থেকে নিয়ে ওই ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহিহ মুসলিম
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তির পরস্পরকে গালি দেওয়ার পরিণাম ফল প্রথমে গালিদাতার ওপর পতিত হয়। যতক্ষণ না নির্যাতিত ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে। -সহিহ তিরমিজি
বর্ণিত হাদিসের বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বলেন, গালির পরিণাম ফল তখনই প্রথম গালিদাতার ওপর পতিত হবে, যখন দ্বিতীয় ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন না করবে। আর যদি দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করে ফেলে, তাহলে সেও গোনাহে জড়িয়ে পড়লো। প্রথম গালিদাতা এ জন্যে গোনাহগার হবে যে, সে গালি শুরু করেছে। অর্থাৎ অন্যায়টা তার মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তির এই জন্যে গোনাহ হবে যে, সে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করে ফেলেছে।
এ ছাড়া হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) গালিদাতাকে মুনাফিক বলে অভিহিত করেছেন। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘নিচু লোকের হাতিয়ার হলো- গালি। যদি কোনো লোক তোমাকে খারাপ কথা বলে, তবে তার কথার জবাব দিয়ো না। কেননা, হতে পারে এর চেয়েও খারাপ কোনো বাক্য তার ঠোঁটের কাছেই রয়েছে। তুমি ওর কথার জবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে তা বলতে শুরু করবে। ’
ইসলাম মানুষকে সভ্যতার শিক্ষা দেয়। শিক্ষা দেয় মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার। অথচ আমাদের সমাজের অনেক মুসলিম এমনকি শিক্ষিতরাও ঘরে-বাইরে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে অসুস্থ মানুষিকতার পরিচয় দেয়।
কথায় আছে, ব্যবহারে বংশের পরিচয়। সভ্য মানুষের আচরণ তার ভালো বংশ পরিচয় প্রকাশ করে। একজন অসভ্য-অভদ্র ও মন্দ মানুষ যখন যুক্তিতে হেরে যায়, তখন সে সাহায্য নেয় গালির। কারণ গালির ভূমিকা হচ্ছে, আলোচনার পথ রোধ করা।
জিহবা যেহেতু মনের মুখপাত্র, তাই সব অঙ্গের কার্যকলাপ জিহবা দ্বারা প্রকাশ পায়। তাই আমাদের উচিত, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, মন্দ কথা, খারাপ উক্তি ও গালি থেকে বিরত থাকা। কারণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে চুপ থেকেছে, সে মুক্তি পেয়েছে। -সুনানে তিরমিজি
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এমএইউ/