দক্ষিণ কোরিয়া মূলত খ্রিস্টান এবং কনফুসীয় জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে পরিচিত। তার পরও নাগরিক সুবিধা ও উন্নত জীবনধারার জন্য সর্বজনবিদিত কোরিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ বৌদ্ধ ও ২০ শতাংশ খ্রিস্টান। প্রায় ২৫.৩ শতাংশ কোরিয় নাগরিক নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম পালন করেন না।
দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। সেই সঙ্গে রয়েছে দেঢ় লাখ বিদেশি মুসলিম কর্মজীবী। ১০২৪ খ্রিস্টাব্দে আরব ধর্ম প্রচারকরা সর্বপ্রথম কোরিয়ায় আসেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে ১৭টি মসজিদ, ৬টি ইসলামিক সেন্টার ও ১১০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।
১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কোরিয়ায় নারীদের হিজাব পরিধানের জন্য তেমন কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। অযাচিতভাবে মুসলমানদের হেনস্থার শিকারও হতে হয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট নানা জটিলতার কারণে দেশটিতে পর্যটকের আগমন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এ কারণে মুসলিম পর্যটকদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া তার দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া মনেপ্রাণে চাইছে, দেশটিতে আরও বেশি পরিমাণে মুসলিম পর্যটক ও ছাত্ররা আসুক।
পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায়, পর্যটন খাতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা মুসলিম পর্যটকদের মাধ্যমে পূরণে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে কোরিয়ান কর্তৃপক্ষ মুসলিম তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাচ্ছে।
কোরিয়ান পর্যটন সংস্থার প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশটিতে মুসলিম পর্যটকদের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ১২ মিলিয়নে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়টি বুঝতে পেরে দেশটি তাদের রেস্টুরেন্টগুলোতে হালাল খাবারের ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। হোটেলগুলোতে আলাদা নামাজের স্থানের ব্যবস্থা করছে।
রাজধানী সিউলের চারপাশে গড়ে ওঠা মুসলিম-বান্ধব হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহের এই পরিবর্তনের বিষয়গুলো উল্লেখ তরে প্রচারণাও বাড়িয়েছে সিউল পর্যটন সংস্থা।
এর মাধ্যমে মূলত দক্ষিণ কোরিয়ানরা তাদের সংস্কৃতি ও ইসলামের মধ্যে একটি ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা করছেন।
কারণ, কোরিয় উপদ্বীপের সঙ্গে ইসলামের সর্ম্পক বেশ পুরোনো ও ঐতিহাসিক। ৯ম শতাব্দীতে সিল্ক রোডের যুগ থেকে এ সর্ম্পকের সূচনা। নানা টানাপোড়েনেও যে এ সর্ম্পক ভাঙেনি সেটাই বুঝাতে চাচ্ছে সিউল।
-আল জাজিরা অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমএইউ/