দুনিয়াজুড়ে মানুষ আজ নৈতিক অধঃপতনের অতল গহব্বরে নিমজ্জিত। এই অধঃপতন থেকে মানবজাতির পরিত্রাণের একমাত্র পথ হচ্ছে- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনীত জীবন বিধানের দিকে ফিরে আসা।
হহরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অসাধারণ বিনয়ী, পরোপকারী, সদালাপি ইত্যাদি মহৎ গুণে গুণান্বিত অনুপম চরিত্রের অধিকারী। শৈশবকাল থেকে মহানবী (সা.)-এর জীবনে এক দুর্লভ ব্যক্তিত্বের চিহ্ন পরিস্ফুটিত হয়। মহানবী (সা.) ছিলেন অত্যন্ত দয়াবান ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
সহিহ বোখারি শরিফে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বীর বাহাদুর। অতএব ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্দ এই সমাজে রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল অশান্তির দাবানল থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। কাফেররাও তার আদর্শের কাছে মাথানত করেছিলো। তারা জানতো মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বের কারণে তাদের নেতৃত্ব ধূলোয় মিশে যাবে। তাই তারা সর্বশক্তি দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিরোধিতা করেছিলো। পরিণামে তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র মহত্মের অত্যুজ্জ্বল আলোকমালায় উদ্ভাসিত হয়েছিল তৎকালীন বিশ্ব। তাই মহানবীর নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
নবী মুহাম্মদ (সা.) দানশীলতা, উদারতা ও বদান্যতায় ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি না বলতেন না।
হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি দিয়ে দিতেন। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট চাইল, তিনি তাকে দুই পাল ছাগলের মধ্য থেকে এক পাল দিয়ে দিলেন। সে লোক নিজ গোত্রে এসে বলল, হে গোত্রের লোকেরা! তোমরা মুসলমান হয়ে যাও, কেননা মুহাম্মদ এমন ব্যক্তির ন্যায় দান করে যে দারিদ্রের ভয় করে না। -সহিহ মুসলিম
সহনশীলতায় ও ক্রোধ সংবরণে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবোর্চ্চ আদর্শ। কখনও তার পক্ষ হতে মন্দ কথন ও কর্ম প্রকাশ পায়নি, নির্যাতন-অবিচারের শিকার হলেও কখনও প্রতিশোধ নেননি। কখনও কাউকে প্রহার করেননি।
উহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুখমণ্ডল আঘাতপ্রাপ্ত হলো, কয়েকটি দাঁত ভেঙে গেলো, মাথায় পরিধেয় শিরস্তান খণ্ড-বিখণ্ড হলো, তার পরও তিনি কুরাইশদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করেননি। বরং তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করো, কেননা তারা জানে না। -সহিহ মুসলিম
বস্তুত প্রতিশোধ নেওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সীমালংঘনকারীকে মার্জনা করা একটি উদারণ ও মহৎগুণ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ গুণে সর্বাপেক্ষা গুণান্বিত ছিলেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের অনেক ঘটনাবলীর বিবরণ বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি যখন মক্কা বিজয় করলেন, কুরাইশের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নতশীরে উপবিষ্ট পেলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, হে কুরাইশগণ! তোমাদের সঙ্গে এখন আমার আচরণের ধরন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি? তারা বলল, আপনি উদার মনস্ক ভাই ও উদার মনস্ক ভাইয়ের ছেলে। হজরত রাসূল (সা.)বললেন, যাও, তোমরা মুক্ত। তিনি তার ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে ঘটানো সমস্ত অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিলেন।
সাহসিকতা, নির্ভীকতা, যথাসময়ে উদ্যোগ গ্রহণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ গুণ ছিল। তার সাহিসকতা বড় বড় বীরদের নিকট অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃত। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহসিকতার একটি নমুনা পাওয়া যায় এ ঘটনায়। ঘটনাটি হলো-
এক রাতে মদিনার এক প্রান্তে কারও চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেল। কিছু মানুষ আওয়াজের দিকে অগ্রসর হলো, কিন্তু দেখা গেল রাসূলুল্লাহ (সা.) একাই আওয়াজের উৎসস্থলে তাদের আগে গিয়ে পৌছেছেন। বরং তিনি যখন অবস্থা দেখে ফিরছিলেন তখন তাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। তিনি ছিলেন আবু তালহার অসজ্জিত ঘোড়ার ওপরে। তরবারি ছিল তার স্কন্ধে। আবু তালহা বলতে লাগলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বাপেক্ষা সুন্দর, সর্বাপেক্ষা দানশীল, সর্বাপেক্ষা সাহসী। -সহিহ বোখারি
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমএইউ/